কবি জসীমউদ্দীনের কালজয়ী কবিতা - আসমানী



আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
 রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
 বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
 একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
 একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
 তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
 পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়,
 সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।
 মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি
 থাপড়েতে নিবিয়ে দেছে দারুণ অভাব আসি।
 পরনে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস,
 সোনালি তার গা বরণের করছে উপহাস।
 ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,
 সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।
 বাঁশির মতো সুরটি গলায় ক্ষয় হল তাই কেঁদে,
 হয় নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।
 আসমানীদের বাড়ির ধারে পদ্ম-পুকুর ভরে
 ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিল্-বিল্-বিল করে।
 ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে,
 সেই জলেতে রান্না-খাওয়া আসমানীদের চলে।
 পেটটি তাহার দুলছে পিলেয়, নিতুই যে জ্বর তার,
 বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর।

======

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের প্রধান কুশীলব ধীবরের চরিত্র বিশ্লষণ করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।

পথের দাবি গল্পে গিরিশ মহাপাত্রের পোশাক পরিচ্ছেদ ও অদ্ভুত দর্শন বিষয়ক আলোচনা ।

দাম গল্পটি ছাত্র শিক্ষক পবিত্র সম্পর্কের উপর গভীর ছায়াপাত করেছে । মাস্টারমশায় শাসন করতেন , ভালবাসতেন না । এটা ঠিক নয় ' , আলোচনা করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।