আমাদের ছোট নদী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি। চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা, একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক, রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক। আর-পারে আমবন তালবন চলে, গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে। তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে। সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে। বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে, বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে। আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর। মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে, ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে। দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া, বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।।
পোস্টগুলি
রবীন্দ্র কবিতা লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
অভিলাষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১ জনমনোমুগ্ধকর উচ্চ অভিলাষ! তোমার বন্ধুর পথ অনন্ত অপার । অতিক্রম করা যায় যত পান্থশালা , তত যেন অগ্রসর হতে ইচ্ছা হয় । ২ তোমার বাঁশরি স্বরে বিমোহিত মন — মানবেরা , ওই স্বর লক্ষ্য করি হায় , যত অগ্রসর হয় ততই যেমন কোথায় বাজিছে তাহা বুঝিতে না পারে । ৩ চলিল মানব দেখো বিমোহিত হয়ে , পর্বতের অত্যুন্নত শিখর লঙ্ঘিয়া , তুচ্ছ করি সাগরের তরঙ্গ ভীষণ , মরুর পথের ক্লেশ সহি অনায়াসে । ৪ হিমক্ষেত্র , জনশূন্য কানন , প্রান্তর , চলিল সকল বাধা করি অতিক্রম । কোথায় যে লক্ষ্যস্থান খুঁজিয়া না পায় , বুঝিতে না পারে কোথা বাজিছে বাঁশরি । ৫ ওই দেখো ছুটিয়াছে আর-এক দল , লোকারণ্য পথমাঝে সুখ্যাতি কিনিতে ; রণক্ষেত্রে মৃত্যুর বিকট মূর্তি মাঝে , শমনের দ্বার সম কামানের মুখে । ৬ ওই দেখো পুস্তকের প্রাচীর মাঝারে দিন রাত্রি আর স্বাস্থ্য করিতেছে ব্যয় । পহুঁছিতে তোমার ও দ্বারের সম্মুখে লেখনীরে করিয়াছে সোপান সমান । ৭ কোথায় তোমার অন্ত রে দুরভিলাষ ‘ স্বর্ণঅট্টালিকা মাঝে ?' তা নয় তা নয় । ‘ সুবর্ণখনির মাঝে অন্ত কি তোমার ?' তা নয় , যমের দ্বারে ...
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
অভিমান - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কারে দিব দোষ বন্ধু, কারে দিব দোষ! বৃথা কর আস্ফালন, বৃথা কর রোষ। যারা শুধু মরে কিন্তু নাহি দেয় প্রাণ, কেহ কভু তাহাদের করে নি সম্মান। যতই কাগজে কাঁদি, যত দিই গালি, কালামুখে পড়ে তত কলঙ্কের কালি। যে তোমারে অপমান করে অহর্নিশ তারি কাছে তারি 'পরে তোমার নালিশ! নিজের বিচার যদি নাই নিজহাতে, পদাঘাত খেয়ে যদি না পার ফিরাতে-- তবে ঘরে নতশিরে চুপ করে থাক্, সাপ্তাহিকে দিগ্বিদিকে বাজাস নে ঢাক। একদিকে অসি আর অবজ্ঞা অটল, অন্য দিকে মসী আর শুধু অশ্রুজল। ২৬ চৈত্র, ১৩০২