কৃমি থেকে বাঁচুন । ড . আবু তাহের
ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলের একটি বিস্তীর্ণ এলাকার জনসাধারণ মাটি এবং মাটিবাহিত রোগের দ্বারা সারাবছর আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাছাড়া আফ্রিকা মহাদেশ এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে এই ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। প্রতি বছর গড়ে ১.৩৫ মিলিয়ন মানুষ কেবলমাত্র মাটি দ্বারা বাহিত রোগের আক্রমণে মারা যায়।১৯৯৩-২০১৩ অবধি 'বিশ্বব্যাপী রোগের প্রাদুর্ভাব এবং ক্ষতিকর প্রভাব'এর উপর সমীক্ষা করে দেখা গেছে কেবলমাত্র দু'লাখ মানুষ প্রতিবছর কৃমি এবং কৃমিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
কৃমি মানব শরীরে বসবাস কারী এক ধরনের ক্ষতিকর পরজীবী।এরা সাধারণত মানুষের অন্ত্রে বসবাস করে এবং সেখান থেকেই পুষ্টি সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে।একটি পরিণত কৃমির আকার ৬ থেকে ১৪ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে দেখা যায়।কৃমির ডিম খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে আবার কখনও কখনও ত্বকের ভেতরে সরাসরি প্রবেশ করে এই ক্ষতিকর পরজীবী। সাধারণত অল্প সেদ্ধ বা অ-সেদ্ধ খাবার খেলে এদের আক্রমণ সহজে হয়। আবার খালি পায়ে খোলা জায়গায়,মাঠে ময়দানে হাঁটাহাঁটি করলেও কৃমি প্রবেশ করতে পারে আমাদের শরীরে। শুধুমাত্র অন্ত্রে নয় ,যকৃতেও বাসা বাঁধতে দেখা যায় হালকা হলুদ রঙের, কেঁচোর মত দেখতে এই পরজীবীদের।
আমাদের দেশে গোল কৃমি( Round Worm),ফিতা কৃমি (Tape Worm), কেঁচো কৃমি,বক্র কৃমি,সুতা কৃমি প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের কৃমি দেখা যায়।শিশুদের জটিল সমস্যাগুলোর একটা অন্যতম হল কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া।বড়রা যে আক্রান্ত হয় না এমনটাও নয়। বিশেষ করে মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশি লক্ষ্য করা যায়। গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে কৃমির আক্রমণ মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে রক্তাল্পতা জনিত সমস্যার কারণে মা এবং ভ্রূণ উভয়ের প্রভূত ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। সারা পৃথিবীতে শিশুদের অপুষ্টি জনিত রোগের একটি অন্যতম কারণই হল কৃমির আক্রমণ। সাধারণত নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব, অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন খাবার পাত্র, খাবার আগে পরিষ্কার করে হাত না ধোওয়া,অসেদ্ধ ও অর্ধসেদ্ধ খাদ্যগ্রহণ,খালি পায়ে খোলা জায়গায় হাঁটা-- ইত্যাদি কারণে আমাদের তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে কৃমি আক্রান্তের আধিক্য দেখা যায়।
শরীরে প্রবেশ করার পরে অন্ত্রে বসবাস করার সময় ক্ষুদ্রান্ত্রের উৎসেচকের সাহায্য নিজেদের লার্ভা নির্গমন করে।এই লার্ভা তখন আবার রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে হৃদযন্ত্র, ফুসফুসের অ্যালভিওলাই,যকৃতে প্রবেশ করে। ফুসফুসে প্রবেশ ক'রে অ্যালভিওলাই ছিদ্র ক'রে শ্বাসনালীর সাহায্যে আবার ক্ষুদ্রান্ত্রে এসে বসবাস করে। লার্ভাগুলো ক্ষুদ্রান্ত্রে এসে পুষ্টি সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে এবং বংশবিস্তার করে। একটি স্ত্রী কৃমি মানুষের অন্ত্রে প্রতিদিন প্রায় দু'লাখের উপরে ডিম পাড়ে।এই ডিম ফুটে বাচ্চা কৃমি তৈরি হতে সময় নেয় ১০ থেকে ৪০ দিনের মত সময়।পরে তা মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে আসলে আবার সেই লার্ভা সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে উপরে উল্লেখিত কারণগুলো দেখা গেলে।
কৃমি নিয়ে সাধারণত বেশ কিছু ভুল ধারণা গ্রাম বাংলার মানুষের মধ্যে রয়েছে। যেমন অনেকে মনে করেন শরীরে দু'একটা কৃমি থাকা ভালো। খাবার হজমে সাহায্য করে। কিন্তু কৃমির উপস্থিতি সবসময়ই আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।কৃমি হজমে কোনোরকম সাহায্য তো করেই না উপরন্তু বদহজম, ক্ষুধামন্দ্য,পেটে ব্যথা, বমিবমি ভাব, অজীর্ণ, রক্তাল্পতা জনিত সমস্যা দেখা যায়। মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণের ফলে পেটে কৃমি হয় এমন ধারণাও সম্পূর্ণ ভুল। সেঁতসেঁতে ভিজে জায়গা,নরম মাটি, অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ কৃমির বসবাসের উপযোগী জায়গা।তাই মলের মাধ্যমে বা খাবারের দ্বারা হয় মুখের মাধ্যমে বা ত্বকের সাহায্যে এরা শরীরে ঢুকে অবাঞ্ছিত কাজ করে --এটাই মনে রাখার বিষয়।
শিশু বা বড়রা কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কিনা জানার জন্য কতকগুলো প্রাথমিক উপসর্গের উপর জোর দেওয়া হয়। যেমন পায়খানার রাস্তায় চুলকানো, পায়খানার সাথে কৃমি বেরিয়ে আসতে দেখা, পেটে ব্যথা, বমিবমি ভাব, অজীর্ণ, বদহজম, গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি।
এছাড়াও শিশুদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন স্কুলে পড়া শিশুদের মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, কোনো নতুন বিষয় শিখতে অত্যধিক দেরি হয়। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায় কৃমি আক্রান্ত বাচ্চার স্কুলে শিক্ষার উন্নতি খুব কম, মনোযোগের অভাব, সামাজিক ভাবে মেলামেশা করায় অনীহা, স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব, ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়। সেক্ষেত্রে আয়রনের অভাব জনিত রক্তাল্পতা এই সমস্ত লক্ষণের অন্যতম কারণ।
প্রি-স্কুল এবং স্কুলে পড়াকালীন বাচ্চাদের উভয়ের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের এই বিষয় গুলোর উপর খেয়াল রাখা দরকার। একটি পরিণত কৃমি আমাদের শরীর থেকে গড়ে প্রতিদিন ০.২থেকে ০.৭ মিলিলিটার রক্ত শোষণ করে বেঁচে থাকে। একটি স্কুলের বাচ্চাদের আয়রন বড়ি সরবরাহ করে দেখা গেছে তাদের স্কুল পারফরম্যান্স আগের চেয়ে অনেক ভালো। তাছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে কেউ যদি কৃমি দ্বারা আক্রান্ত থাকে তাহলে শরীরের বৃদ্ধি কমে যায়,অল্পেতে ক্লান্ত হয়ে পড়া, সামাজিক উৎকর্ষতা কমে যাওয়া, সন্তান ধারণ এবং প্রসবে বিঘ্ন ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়াও শরীরে অনাক্রম্যতা কমে যাওয়ার কারণে যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া,এইচআইভির মত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। বুদ্ধি লোপ, স্মৃতিভ্রম, উদাসীনতার মত লক্ষণ দেখা যায়। আমাদের অন্ত্রে বসবাস করার সময় এরা অন্ত্রের প্রদাহ ঘটায়,অন্ত্র ফুটো (Perforation) হয়ে গিয়ে ইনফেকশন(Peritoneal Infection) ছড়িয়ে যেতে পারে, আবার কখনও রোগের মাত্রা চরমে পৌঁছলে অন্ত্রে পচন (Gangrene) দেখা দিতেও পারে। অস্থি এবং অস্থিসন্ধির উপরেও এর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে দেখা গেছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে ব্যাপক আকারে এর কুপ্রভাব পড়ে আমাদের শরীরে।তাই সঠিক সময়ে শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা প্রয়োজন।
গর্ভবতী মহিলা, ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি, জ্বরের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কৃমির ওষুধ খাওয়া উচিৎ নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো বয়স এবং লিঙ্গ ভেদে অন্যান্য রোগের প্রকোপের মাত্রা অনুযায়ী ওষুধের ডোজ নির্ধারণ করা হয়। কৃমির লার্ভা নাশক ওষুধ প্রয়োগে রোগীর সম্পূর্ণ রোগমুক্ত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু কথায় আছে ' 'Prevention is better than cure' তাই শিশুদের এবং বড়দেরও কতকগুলো বিষয়ে সচেতন থাকলে কৃমির দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।খালি পায়ে হাঁটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। খোলা বাজারের কাটা ফলমূল খাওয়া যাবে না। শাকসবজি ভালো ভাবে পরিষ্কার জলে ধুয়ে তবেই রান্না করতে হবে । পারতপক্ষে অর্ধসেদ্ধ শাকসবজি না খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ । আজকাল কিছু ফাস্টফুডের দোকানে কাঁচা বাঁধাকপি বা আরও কিছু কাঁচা শাক মেশাতে দেখা যায়। সেগুলো খেলে একদিকে যেমন খাদ্য বিষক্রিয়া জনিত ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে অন্যদিকে কৃমির আক্রমণের সম্ভাবনা ও থাকে।
শিশুদের জন্মের ছয় মাস বয়স অবধি কেবলমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো বাধ্যতামূলক। এই সময়ে কোনোরকম বাইরের প্যাকেটজাত দুগ্ধ,জল দেওয়া উচিৎ নয়। খাবার পরিবেশনের সময় ভালো করে হাত ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। খাবার খেতে বসেও একই কথা মাথায় রাখা জরুরি।থালা বাসন ও পরিষ্কার জল দিয়ে ধোওয়া বাঞ্ছনীয়। যাতে পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধা যুক্ত পায়খানা বাথরুমের ব্যবস্থা থাকে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের দেশে সেকেন্ডারি এবং টারসিয়ারি পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়, প্রাথমিক বা প্রারম্ভিক পর্যায়ের চিকিৎসার উপর সেরকম গুরুত্ব দেওয়া হয় না।এ বিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যাতে রোগের বিস্তার এবং আক্রমণ প্রতিহত করা যায় তার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করে ব্যক্তিগত স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি একান্ত ভাবে জরুরি।তাতে একদিকে যেমন জীবনযাত্রার মান পাল্টাবে অন্যদিকে রোগের জীবাণু ও তাদের বিস্তারের হাত থেকে সহজে রেহাই মিলবে।তাই ব্যক্তিগতভাবে এবং সরকারি তরফে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরিষেবার উপর নজরদারি বাড়ানো দরকার। শুধুমাত্র কৃমি নয়, কমিউনিকেবল যে সমস্ত ডিজিজ রয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই প্রাথমিক স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকোপ কমানো যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাই প্রিভেনশন স্তরে বেশি অর্থ ও লোকবল ব্যয় করছে। কৃমির সঠিক সময়ে শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা না হলে তা কতকগুলো জটিল সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন শরীর রক্তশূন্য হয়ে পড়ে অর্থাৎ মারাত্মক রক্তাল্পতা, শিশুদের ক্ষেত্রে পেট ফুলে ওঠা,শরীর দূর্বলতা ও ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, শরীরের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়া, অপুষ্টি জনিত রোগ ইত্যাদি দেখা যায়।
দু'বছরের বেশি বয়সী শিশু অথবা বড়রা কৃমিনাশক ওষুধ চার মাস পর পর চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারবেন।একক মাত্রার ওষুধের ক্ষেত্রে বাতের বেলায় ওষুধটি সেবন করতে হবেঅপুষ্টিজনিত রক্তস্বল্পতার ক্ষেত্রে কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।কৃমিনাশক ওষুধ সপরিবারে সেবনে কার্যকর ফল পাওয়া যায়।অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে অথবা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের সঙ্গে চিকিত্সকের পরামর্শ ব্যতিত কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করা যাবে না।গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে, কৃমিনাশক ওষুধ সেবন নিষিদ্ধ। তবে অপুষ্টির শিকার হলে এবং চিকিত্সক প্রয়োজন মনে করলে গর্ভবতী মায়েদের কৃমিনাশক ওষুধ দিতে পারেন।
২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের এবং বড়দের ক্ষেত্রে কৃমিনাশক ওষুধ সাধারণত বছরে দুই থেকে তিনবার সেবনের পরামর্শ হয়। অপরদিকে ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে, চিকিত্সকরা কোন ঝুঁকি নিতে চান না। বাজারে সাধারণত পাইরেন্টাল পামোয়েট, অ্যালবেনডাজল, মেবেনডাজল এবং লিভামিজল জাতীয় কৃমিনাশক ওষুধ পাওয়া যায়।
পাইরেন্টাল পামোয়েট জাতীয় ওষুধ সাধারণত ২ বছরের বেশি বয়সী শিশু ও বড়দের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত গুঁড়ো কৃমির চিকিত্সায় ব্যবহার করা হয় যদিও গোলকৃমি, বক্রকৃমি চিকিত্সার ক্ষেত্রেও ওষুধটি সমানভাবে কার্যকর। শিশু ও বড়দের জন্য একবার সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথমবার সেবনের পরেও যদি কৃমির সংক্রমণ দূর না হয় তবে দু'সপ্তাহ পর আবার সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। পাইরেনটাল পামোয়েট জাতীয় ওষুধ সেবনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব কিংবা ডায়রিয়া হতে পারে, তবে সমস্যাগুলো বিশেষ গুরুতর নয়।
অ্যালবেনডাজল মূলত ফিতা কৃমির চিকিত্সায় ব্যবহার করা হয়, যদিও এটি গুঁড়ো কৃমি, বক্রকৃমি এবং গোল কৃমির চিকিত্সায়ও সমানভাবে কার্যকর। অ্যালবেনডাজল একক মাত্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম ওষুধ শিশু অথবা বড়দের কৃমিনাশক হিসেবে সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথমবার সেবনের পরেও কৃমির উপদ্রব থাকলে দু'সপ্তাহ পর আবার ওষুধটি সেবন করতে হবে। ওষুধটি সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় পেট ব্যথা, বমি হওয়া, শরীরে গুটিগুটি দাগ, মাথাব্যথা, মাথাঘোরা
, চুল পড়া, জ্বর জ্বর ভাব ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে যদিও এগুলো তেমন গুরুতর কিছু নয়।
মেবেনডাজল আরেক ধরনের পরিচিত কৃমির ওষুধ। এ ওষুধের কাজ অনেকটা অ্যালবেনডাজলের মতোই। তবে এটি দিনে দু'বার পরপর তিনদিন খেতে হয়। এটি সেবনে অ্যালবেনডাজলের মতোই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
লিভামিজল নামে রয়েছে আরেকটি কৃমিনাশক ওষুধ। পরপর তিনদিন ৩০ মিলিগ্রাম মাত্রার ট্যাবলেট অথবা সিরাপ দিনে একবার করে সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। লিভামিজল ক্যান্সার নিরোধক, নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম জাতীয় কিডনির অসুখেও ব্যবহার হয়। এ ওষুধ সেবনে শরীরে বেশকিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া এ ওষুধটি সেবন করা উচিত নয়।
পরিশেষে বলা দরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য কিছু সংস্থা ২০২০ সালের মধ্যে কৃমি দ্বারা এবং মাটি দ্বারা বাহিত রোগ জনিত ভোগান্তি এবং মৃত্যু এড়ানোর জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রতিদিন গড়ে ৭৫% কৃমি আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। ব্যক্তিগত স্তরে সচেতনতা এবং সরকারি মদতে চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে একদিন এই লক্ষমাত্রা অর্জন সত্যি দুরূহ নয়।
প্রবন্ধটি পূর্বে আনন্দবাজার স্বাস্থ্য বিভাগে প্রকাশিত ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন