পোস্টগুলি

ছোটগল্প লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আশ্রয় । । আরিফুল ইসলাম সাহাজি

ছবি
তুই কিছু দেখিস নি নিশীথ , ধমকে উঠেছিলেন নিলেশ  জেঠু । কথা বার হয়নি মুখ দিয়ে নিশীথের । অনেক  কিছু দেখেছে সে । দেখেছে জেঠুর অন্য এক রূপ । বাবা নেই । মা অন্যের হাত ধরে পালিয়ে গেছে অভুক্ত থাকবে না বলে । মামারা বাড়তি বোঝা বলে দূর করে দিয়েছিল । পাড়ার মামা হরেন দিয়ে গিয়েছিলেন জেঠুর কাছে । আমার ভাইয়ের রক্ত বলে বুকে জড়িয়ে নেন জেঠু । জেঠিমা দাওয়ায় বসেছিলেন গম্ভীরমুখে । তিনটে বাচ্ছা , নিজেরা দুজন । নূন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা । কোন একটা চায়ের দোকানে দিয়ে দাও বছর সাল একবার দেখে আসলেই হবে । জেঠিমার কথাগুলোর মর্মার্থ না বুঝলেও , বছর এগারোর নিশীথ বুঝতে পেরেছিল জেঠিমা চান না সে থাকুক । আপনা আপনিই মুখ ম্লান হয়ে গিয়েছিল । কিছু মনে করিস না , বাপ । আমাদের পাঁচজনের হলে তোরও হবে দু মুঠো । মাথায় হাত রেখেছিলেন জেঠু । স্কুলে প্রথম প্রথম অসুবিধা হতো । মনমরা হয়ে থাকতো নিশীথ । আলোক দা , শান্তি দা , আলপনা কথায় বলতো না । জেঠিমা নিষেধ করেছিল কিনা , করতেও পারে  । আমার স্কুল ড্রেসটা ছিঁড়ে গেছে , একটু সেলায় করে দেবে । কিছুক্ষন নিশীথের দিকে তাকিয়ে ছিলেন জেঠিমা । যেমন মামীরা তাকাতো । জমিদা...

ভারতবর্ষ - আরিফুল ইসলাম সাহাজি

ছবি
আকাশ মুখভারি করে ছিল সকাল থেকেই । সারারাত ঝুমঝুম করে বৃষ্টি হয়ে ভোরের দিকে থামলেও একটা থমথমে ভাব । অন্যান্য দিন হলে শান্তনু মনভাল করা এই সোনালী বিকালে ছাদের উপর উঠে দেশের বাড়ির কথা ভাবতো । দাদার কথা , বোনদের কথা , পুঁচকে ভাইঝিটার কথা । মা বাবা গত হয়েছেন বেশ কয়েকবছর । মা বাবাকে দেখা যাবে না আজ । আকাশ মেঘলা হওয়ায় আজ ওঠেনি তারা । এই বিভুঁই বিদেশে সে একা । যদিও দেশের গন্ডি এক । তবুও দেশ বলতে তার গ্রাম বারাসাত শহরের রায়পুর । কত স্মৃতি শান্তনুকে বিভোর করে ।বড় পুকুর দীঘির পাড়ে মছির ভাইয়ের চাতালে বসে প্রিয় বন্ধু কুতুবের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা । দিনের শেষে কিছু হবে না বলে উঠে আসা । মায়ের মুখটা খুব মনে পরে শান্তনুর । বাবার কথাও মনে পরে ওর । জীবনে বিশেষ কিছু সাফল্য পায়নি ও । তবুও সংবাদপত্র গুলোতে গল্প কবিতা বার  মা গর্ব করতেন । বলতেন আমার শান্তনু একদিন অনেক বড় হবে।  চিনবে সবাই । আকাশের দিকে ফিরে মাঝে মাঝে বিড় বিড় করে শান্তনু । আরতি অবাক হয় । মুখে কিছু বলে না ।  শান্তনুর ভিতরের হাহাকারকে সে অনুভব করে । <script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsby...

রবীন্দনাথ ঠাকুরের অমর ছোটগল্প - হালদার গোষ্টি

ছবি
হালদারগোষ্ঠী এই পরিবারটির মধ্যে কোনোরকমের গোল বাধিবার কোনো সংগত কারণ ছিল না । অবস্থাও সচ্ছল , মানুষগুলিও কেহই মন্দ নহে কিন্তু তবুও গোল বাধিল । কেননা , সংগত কারণেই যদি মানুষের সব-কিছু ঘটিত তবে তো লোকালয়টা একটা অঙ্কের খাতার মতো হইত , একটু সাবধানে চলিলেই হিসাবে কোথাও কোনো ভুল ঘটিত না ; যদি বা ঘটিত সেটাকে রবার দিয়া মুছিয়া সংশোধন করিলেই চলিয়া যাইত । কিন্তু , মানুষের ভাগ্যদেবতার রসবোধ আছে ; গণিতশাস্ত্রে তাঁহার পাণ্ডিত্য আছে কি না জানি না , কিন্তু অনুরাগ নাই ; মানবজীবনের যোগবিয়োগের বিশুদ্ধ অঙ্ক-ফলটি উদ্ধার করিতে তিনি মনোযোগ করেন না । এইজন্য তাঁহার ব্যবস্থার মধ্যে একটা পদার্থ তিনি সংযোগ করিয়াছেন , সেটা অসংগতি । যাহা হইতে পারিত সেটাকে সে হঠাৎ আসিয়া লন্ডভন্ড করিয়া দেয় । ইহাতেই নাট্যলীলা জমিয়া উঠে , সংসারের দুই কূল ছাপাইয়া হাসিকান্নার তুফান চলিতে থাকে । এ ক্ষেত্রেও তাহাই ঘটিল — যেখানে পদ্মবন সেখানে মত্তহস্তী আসিয়া উপস্থিত । পঙ্কের সঙ্গে পঙ্কজের একটা বিপরীত রকমের মাখামাখি হইয়া গেল; তা না হইলে এ গল্পটির সৃষ্টি হইতে পারিত না । যে পরিবারের কথা উপস্থিত করিয়াছি তাহার মধ্যে সব চ...

আরিফুল ইসলাম সাহাজির ছোট গল্প

ছবি
প্রণাম নেবেন স্যার (অনুগল্প ) প্রায় এক দশক আপনার সঙ্গে দেখা হয়নি ।কর্ম ব্যস্ততা একটা ছল ।স্বার্থপর হয়ে গেছি ।কলকাতার  চাকচিক্যে অন্ধ হয়ে ছিলাম একযুগ ।গতকাল রাতে ,আপনাকে দেখলাম ।স্বপ্নে ।আপনি পড়াচ্ছেন, দোতলার কোনার ঘরটায় ।আমি ,ফিরোজ ,আলামিন আর সঞ্জীব এক বেঞ্চ বসে আছি ।আমাদের বয়স অনেকটা কমে গেছে ।মন্ত্রমুগ্ধর মত শুনছি ।কখনও শক্তি ,কখনও সুভাষ ,নজরুল থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছেন আপনি ।প্রিয় শিক্ষক হারুন আলম স্যার । অদিতির ডাকে ঘুম ভাঙলো।অদিতি আমার স্ত্রী।বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র ফিরোজের সঙ্গে যোগাযোগ আছে ।ফিরোজ আমার পাড়ায় থাকে ।একটা সরকারি কলেজে বাংলা পড়ায় ।লেখালিখিও করছে আজকাল ।একটু নামও করেছে ।গত রবিবার ,হঠাৎ করেই আমার বাড়িতে এসেছিল ফিরোজ ।সাধারণত ,রবিবার কোন কাজ  রাখি না ।দিনটা আমার অদিতির আর আমাদের ছেলে অভিকের ।একটু দেরি হলে ,হয়ত বেরিয়ে পড়তাম ।অদিতিই দরজা খুলল । - কেমন আছেন দাদা ।ভিতরে আসুন ।   অভিক ,বাবাকে বল - ফিজ কাকু এসেছেন । অদিতি দারিদ্রতা দেখেনি ।বিয়ের পর ডা: শান্তনু মিত্রকে দেখেছে ।আপনার শানুকে কোনদিন দেখেনি ।আলামিনকে মনে আছে আপনার ? প্রতি ক্লাসে প্রথম হতো ।ও আম...

বিলাসী - শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়

ছবি
পাকা দুই ক্রোশ পথ হাঁটিয়া স্কুলে বিদ্যা অর্জন করিতে যাই। আমি একা নই—দশ-বারোজন। যাহাদেরই বাটী পল্লীগ্রামে, তাহাদেরই ছেলেদের শতকরা আশি জনকে এমনি করিয়া বিদ্যালাভ করিতে হয়। ইহাতে লাভের অঙ্কে শেষ পর্যন্ত একেবারে শূন্য না পড়িলেও, যাহা পড়ে, তাহার হিসাব করিবার পক্ষে এই কয়টা কথা চিন্তা করিয়া দেখিলেই যথেষ্ট হইবে যে, যে ছেলেদের সকাল আটটার মধ্যে বাহির হইয়া যাতায়াতে চার ক্রোশ পথ ভাঙ্গিতে হয়—চার ক্রোশ মানে আট মাইল নয়, ঢের বেশি—বর্ষার দিনে মাথার উপর মেঘের জল ও পায়ের নীচে এক হাঁটু কাদা এবং গ্রীষ্মের দিনে জলের বদলে কড়া সূর্য এবং কাদার বদলে ধূলার সাগর সাঁতার দিয়া স্কুল-ঘর করিতে হয়, সে দুর্ভাগা বালকদের মা-সরস্বতী খুশি হইয়া বর দিবেন কি, তাহাদের যন্ত্রণা দেখিয়া কোথায় যে তিনি মুখ লুকাইবেন, ভাবিয়া পান না। তার পরে এই কৃতবিদ্য শিশুর দল বড় হইয়া একদিন গ্রামেই বসুন, আর ক্ষুধার জ্বালায় অন্যত্রই যান—তাঁদের চার-ক্রোশ হাঁটা বিদ্যার তেজ আত্মপ্রকাশ করিবেই করিবে। কেহ কেহ বলেন শুনিয়াছি, আচ্ছা, যাদের ক্ষুধার জ্বালা, তাদের কথা না হয় নাই ধরিলাম, কিন্তু যাঁদের সে জ্বালা নাই, তেমন সব ভদ্রলোকেই ব...