আরিফুল ইসলাম সাহাজির ছোট গল্প
প্রণাম নেবেন স্যার
(অনুগল্প )
প্রায় এক দশক আপনার সঙ্গে দেখা হয়নি ।কর্ম ব্যস্ততা একটা ছল ।স্বার্থপর হয়ে গেছি ।কলকাতার চাকচিক্যে অন্ধ হয়ে ছিলাম একযুগ ।গতকাল রাতে ,আপনাকে দেখলাম ।স্বপ্নে ।আপনি পড়াচ্ছেন, দোতলার কোনার ঘরটায় ।আমি ,ফিরোজ ,আলামিন আর সঞ্জীব এক বেঞ্চ বসে আছি ।আমাদের বয়স অনেকটা কমে গেছে ।মন্ত্রমুগ্ধর মত শুনছি ।কখনও শক্তি ,কখনও সুভাষ ,নজরুল থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছেন আপনি ।প্রিয় শিক্ষক হারুন আলম স্যার ।
অদিতির ডাকে ঘুম ভাঙলো।অদিতি আমার স্ত্রী।বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র ফিরোজের সঙ্গে যোগাযোগ আছে ।ফিরোজ আমার পাড়ায় থাকে ।একটা সরকারি কলেজে বাংলা পড়ায় ।লেখালিখিও করছে আজকাল ।একটু নামও করেছে ।গত রবিবার ,হঠাৎ করেই আমার বাড়িতে এসেছিল ফিরোজ ।সাধারণত ,রবিবার কোন কাজ রাখি না ।দিনটা আমার অদিতির আর আমাদের ছেলে অভিকের ।একটু দেরি হলে ,হয়ত বেরিয়ে পড়তাম ।অদিতিই দরজা খুলল ।
- কেমন আছেন দাদা ।ভিতরে আসুন ।
অভিক ,বাবাকে বল - ফিজ কাকু এসেছেন ।
অদিতি দারিদ্রতা দেখেনি ।বিয়ের পর ডা: শান্তনু মিত্রকে দেখেছে ।আপনার শানুকে কোনদিন দেখেনি ।আলামিনকে মনে আছে আপনার ?
প্রতি ক্লাসে প্রথম হতো ।ও আমার বাড়ির পাশের জুটমিলে কাজ করে স্যার ।একদিন এসেছিল ।বাড়ি ছিলাম না ।অদিতি ওকে ঢুকতে দেয়নি ।তবে ,ফিরোজের আসা নিয়ে ও কখনও আপত্তি করেনি ।
ফিরোজকে অনেকদিন পরে পর দেখছি ।কেমন বিষন্ন একটা ভাব ।একটু পর উদাস হওয়ার কারণ জানলাম ।ফিরোজ ,প্রগতিশীল লেখক সংঘের সদস্য ।দীর্ঘদিন ধরে ওঁরা ,উত্তরদিক থেকে ধেয়ে আসা রাক্ষুসে হাওয়ার বিরোধিতা করছে ।বাংলার সম্প্রীতির আকাশকে দূষণমুক্ত করবার চেষ্টা করছে ।সম্প্রতি ,সাংবাদিক নারায়ণ মাধব উগ্রপন্থীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ।শুনেছেন হয়ত ।মাধব হত্যাকান্ডের পর প্রগতিশীল লেখক সংঘ , উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে ।মুখপত্র নোঙরের পর পর কয়েকটি সংখ্যায় গর্জে উঠেছে ফিরোজদের কলম ।বিশেষ করে গরু সংখ্যাটা আলোড়ন ফেলেছে চারদিক।
আপনি শুনলে খুশি হবেন ,উগ্রপন্থীরা এখন ফিরোজদের টার্গেট করেছে ।গত শনিবার ,গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কবি নীলাভ চক্রবর্তী ।বেশ কিছুদিন ,হুমকি ফোন পাচ্ছিলেন ।এবারও উত্তাল হয়ে উঠেছিল খাস কলকাতা ।আমিও হেঁটেছি মিছিলে ।
ফিরোজের কাছে কাল থেকে হুমকির ফোন আসছে ।একটুও বিচলিত হতে দেখেনি ওকে ।তিনটা লেখা ভর্তি ডায়েরি দিল ।বলল ,মারা গেলে প্রকাশ করিস ।উগ্রপন্থার সঙ্গে কোন আপস করব না ।
স্যার ।ফিরোজ আমার বাড়ির সামনের চৌমাথায় পড়ে আছে ।অদিতি আমাকে বার হতে দেয়নি ।আপনি বলতেন শান্তনু ,আলম ,আর ফিরোজ আমার নাম রাখবে ।না স্যার ,আমরা কেউ আপনার নাম রাখতে পারেনি ।রেখেছে আপনার ফিরোজ ।কলম হাতে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছে।
কেউ আসেনি স্যার ।ওকে বাঁচাতে ।আমিও না ।
তবে ,মিছিলে সবাই হাঁটবে স্যার ।
প্রণাম নেবেন স্যার
আপনার শানু
(অনুগল্প )
প্রায় এক দশক আপনার সঙ্গে দেখা হয়নি ।কর্ম ব্যস্ততা একটা ছল ।স্বার্থপর হয়ে গেছি ।কলকাতার চাকচিক্যে অন্ধ হয়ে ছিলাম একযুগ ।গতকাল রাতে ,আপনাকে দেখলাম ।স্বপ্নে ।আপনি পড়াচ্ছেন, দোতলার কোনার ঘরটায় ।আমি ,ফিরোজ ,আলামিন আর সঞ্জীব এক বেঞ্চ বসে আছি ।আমাদের বয়স অনেকটা কমে গেছে ।মন্ত্রমুগ্ধর মত শুনছি ।কখনও শক্তি ,কখনও সুভাষ ,নজরুল থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছেন আপনি ।প্রিয় শিক্ষক হারুন আলম স্যার ।
অদিতির ডাকে ঘুম ভাঙলো।অদিতি আমার স্ত্রী।বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র ফিরোজের সঙ্গে যোগাযোগ আছে ।ফিরোজ আমার পাড়ায় থাকে ।একটা সরকারি কলেজে বাংলা পড়ায় ।লেখালিখিও করছে আজকাল ।একটু নামও করেছে ।গত রবিবার ,হঠাৎ করেই আমার বাড়িতে এসেছিল ফিরোজ ।সাধারণত ,রবিবার কোন কাজ রাখি না ।দিনটা আমার অদিতির আর আমাদের ছেলে অভিকের ।একটু দেরি হলে ,হয়ত বেরিয়ে পড়তাম ।অদিতিই দরজা খুলল ।
- কেমন আছেন দাদা ।ভিতরে আসুন ।
অভিক ,বাবাকে বল - ফিজ কাকু এসেছেন ।
অদিতি দারিদ্রতা দেখেনি ।বিয়ের পর ডা: শান্তনু মিত্রকে দেখেছে ।আপনার শানুকে কোনদিন দেখেনি ।আলামিনকে মনে আছে আপনার ?
প্রতি ক্লাসে প্রথম হতো ।ও আমার বাড়ির পাশের জুটমিলে কাজ করে স্যার ।একদিন এসেছিল ।বাড়ি ছিলাম না ।অদিতি ওকে ঢুকতে দেয়নি ।তবে ,ফিরোজের আসা নিয়ে ও কখনও আপত্তি করেনি ।
ফিরোজকে অনেকদিন পরে পর দেখছি ।কেমন বিষন্ন একটা ভাব ।একটু পর উদাস হওয়ার কারণ জানলাম ।ফিরোজ ,প্রগতিশীল লেখক সংঘের সদস্য ।দীর্ঘদিন ধরে ওঁরা ,উত্তরদিক থেকে ধেয়ে আসা রাক্ষুসে হাওয়ার বিরোধিতা করছে ।বাংলার সম্প্রীতির আকাশকে দূষণমুক্ত করবার চেষ্টা করছে ।সম্প্রতি ,সাংবাদিক নারায়ণ মাধব উগ্রপন্থীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ।শুনেছেন হয়ত ।মাধব হত্যাকান্ডের পর প্রগতিশীল লেখক সংঘ , উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে ।মুখপত্র নোঙরের পর পর কয়েকটি সংখ্যায় গর্জে উঠেছে ফিরোজদের কলম ।বিশেষ করে গরু সংখ্যাটা আলোড়ন ফেলেছে চারদিক।
আপনি শুনলে খুশি হবেন ,উগ্রপন্থীরা এখন ফিরোজদের টার্গেট করেছে ।গত শনিবার ,গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কবি নীলাভ চক্রবর্তী ।বেশ কিছুদিন ,হুমকি ফোন পাচ্ছিলেন ।এবারও উত্তাল হয়ে উঠেছিল খাস কলকাতা ।আমিও হেঁটেছি মিছিলে ।
ফিরোজের কাছে কাল থেকে হুমকির ফোন আসছে ।একটুও বিচলিত হতে দেখেনি ওকে ।তিনটা লেখা ভর্তি ডায়েরি দিল ।বলল ,মারা গেলে প্রকাশ করিস ।উগ্রপন্থার সঙ্গে কোন আপস করব না ।
স্যার ।ফিরোজ আমার বাড়ির সামনের চৌমাথায় পড়ে আছে ।অদিতি আমাকে বার হতে দেয়নি ।আপনি বলতেন শান্তনু ,আলম ,আর ফিরোজ আমার নাম রাখবে ।না স্যার ,আমরা কেউ আপনার নাম রাখতে পারেনি ।রেখেছে আপনার ফিরোজ ।কলম হাতে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছে।
কেউ আসেনি স্যার ।ওকে বাঁচাতে ।আমিও না ।
তবে ,মিছিলে সবাই হাঁটবে স্যার ।
প্রণাম নেবেন স্যার
আপনার শানু
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন