ভারতবর্ষ - আরিফুল ইসলাম সাহাজি



আকাশ মুখভারি করে ছিল সকাল থেকেই । সারারাত ঝুমঝুম করে বৃষ্টি হয়ে ভোরের দিকে থামলেও একটা থমথমে ভাব । অন্যান্য দিন হলে শান্তনু মনভাল করা এই সোনালী বিকালে ছাদের উপর উঠে দেশের বাড়ির কথা ভাবতো । দাদার কথা , বোনদের কথা , পুঁচকে ভাইঝিটার কথা । মা বাবা গত হয়েছেন বেশ কয়েকবছর । মা বাবাকে দেখা যাবে না আজ । আকাশ মেঘলা হওয়ায় আজ ওঠেনি তারা ।
এই বিভুঁই বিদেশে সে একা । যদিও দেশের গন্ডি এক । তবুও দেশ বলতে তার গ্রাম বারাসাত শহরের রায়পুর । কত স্মৃতি শান্তনুকে বিভোর করে ।বড় পুকুর দীঘির পাড়ে মছির ভাইয়ের চাতালে বসে প্রিয় বন্ধু কুতুবের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা । দিনের শেষে কিছু হবে না বলে উঠে আসা । মায়ের মুখটা খুব মনে পরে শান্তনুর । বাবার কথাও মনে পরে ওর । জীবনে বিশেষ কিছু সাফল্য পায়নি ও । তবুও সংবাদপত্র গুলোতে গল্প কবিতা বার  মা গর্ব করতেন । বলতেন আমার শান্তনু একদিন অনেক বড় হবে।  চিনবে সবাই । আকাশের দিকে ফিরে মাঝে মাঝে বিড় বিড় করে শান্তনু । আরতি অবাক হয় । মুখে কিছু বলে না ।  শান্তনুর ভিতরের হাহাকারকে সে অনুভব করে ।

<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<!-- babun -->
<ins class="adsbygoogle"
     style="display:block"
     data-ad-client="ca-pub-8859464621580427"
     data-ad-slot="7736028175"
     data-ad-format="auto"
     data-full-width-responsive="true"></ins>
<script>
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
</script>

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস , ইউ .পি শাখার চিপ এডিটর ড . শান্তনু বোস , স্ত্রী আরতি বোস এবং একমাত্র পুত্র অভিজিৎকে নিয়ে তার সুখের সংসার । তবে আজ তিনি ভাল নেই । অভিজিৎ মেডিকেল স্টুডেন্ট । কলকাতা মেডিকেল কলেজ । আজ বাড়ি ফিরছে অভিজিৎ । কত গল্প করবে ছেলেটা । ছেলের চোখ দিয়ে গ্রাম দেখছে শান্তনু । একটু ঘুরে আছিস বাবা ।
বেশ কয়েকবার চিটি লিখেছে অভি । জ্যেটুর কথা , পিসিদের কথা , নাসির কাকুর কথা ।
স্টেশন মাস্টারের দিকে এগিয়ে যায় শান্তনু । দুজনেই বাঙালি । হরিৎ কত সময় পর গাড়ি আসবে ?
- এত চিন্তা করবেন না দাদা , এসে যাবে ।
নিজের জায়গায় এসে বসে শান্তনু । আজ লোকজন বিশেষ নেই । অন্যান্য দিন মুঘলসারাই এ লোকে লোকারণ্য থাকে । স্টেশন এ নতুন নামফলক লাগলেও অন্তরস্থ হয় নি এখনও ।

একটা আবছা গুঞ্জন কানে আসছে । ক্রমে স্পস্ট হচ্ছে । চার নম্বর প্লটফর্মে ভিড় জমতে শুরু করছে । হরিৎ বেরিয়ে এসেছে কাউন্টার থেকে ।
কি ব্যাপার হরিৎ , এত গুঞ্জন কিসের ?
চোর বা পকেটমার হবে দাদা ।
কিন্তু বিষয়টি আরও কোলাহলপূর্ন হয়ে উঠছে । আরও লোক জমছে । শান্তনু উঠে পড়লেন ।
হরিৎ ও পিছনে পিছনে ।
বেশ ভিড় করে আছে লোকজন । শান্তনু ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেলেন । হরিৎ শান্তনুর হাত ধরে বাইরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলেন । চলুন দাদা , এখানে থাকার দরকার নেই । চোখ রক্তবর্ন এখন শান্তনুর । ছেড়ে দাও হরিৎ । তখনও একদল উগ্রবাদী স্লোগান দিচ্ছে , '  হিন্দিবলয় সে বাংগালী দূর হঠ ' , । এগিয়ে গেলেন শান্তনু , দুর্বল পেশী ও হার্টের সমস্যায় জর্জরিত শান্তনু অখন্ড ভারত রক্ষার স্বপ্নে । দুটি হিংস্র যুবককে ঠেলে ফেলে দিলেন । পাশে নেতা গোছের একজন চিনতে পারলো শান্তনুকে । হাতের নাগালে প্রধান শিকার দেখে হিংস্র ক্রূর হাসি হাসলো সে ।

হরিৎ , হিন্দিতে কথা বলতে বলতে সরে গেল । এ দৃশ্য সে দেখতে পারবে না । শান্তনু দার চোখটা বেরিয়ে গেছে । ওই চোখ দিয়েই সে অখন্ড ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখতো । একটু পরেই ছেলেটা ফিরবে । দেশ বাড়ির গল্প শোনা আর হলো না ড : শান্তনু বোসের । ট্রেন আসছে .......

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের প্রধান কুশীলব ধীবরের চরিত্র বিশ্লষণ করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।

পথের দাবি গল্পে গিরিশ মহাপাত্রের পোশাক পরিচ্ছেদ ও অদ্ভুত দর্শন বিষয়ক আলোচনা ।

দাম গল্পটি ছাত্র শিক্ষক পবিত্র সম্পর্কের উপর গভীর ছায়াপাত করেছে । মাস্টারমশায় শাসন করতেন , ভালবাসতেন না । এটা ঠিক নয় ' , আলোচনা করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।