অনুপমার প্রেম : প্রথম অংশ ॥শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়
গল্প : অনুপমার প্রেম
দেখিয়া শুনিয়া অনুর জননী মনে মনে প্রমাদ গণিলেন—এক বৈ মেয়ে নয়, তার আবার এ কি হইল? জিজ্ঞাসা করিলে সে কি- যে বলে, কেহ বুঝিতে পারে না; ঠোঁটের কথা ঠোঁটেই মিলাইয়া যায়। অনুর জননী একদিবস জগবন্ধুবাবুকে বলিলেন, ওগো, একবার কি চেয়ে দেখবে না? তোমার একটি বৈ মেয়ে নয়, সে যে বিনি চিকিৎসায় মরে যায়।
জগবন্ধুবাবু বিস্মিত হইয়া বলিলেন, কি হ’ল ওর?
তা জানিনে। ডাক্তার আসিয়া দেখিয়া শুনিয়া বলিলেন, অসুখ-বিসুখ কিছু নাই।
তবে এমন হয়ে যায় কেন?
জগবন্ধুবাবু বিরক্ত হইয়া বলিলেন, তা কেমন করে জানব?
তবে মেয়ে আমার মরে যাক?
এ ত বড় মুশকিলের কথা, জ্বর নেই, বালাই নেই, শুধু শুধু যদি মরে যায় ত আমি কি ধরে রাখব?
গৃহিণী শুষ্কমুখে বড়বধূমাতার নিকট ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন, বৌমা, অনু আমার এমন করে বেড়ায় কেন?
কেমন করে জানব মা?
তোমাদের কাছে কি কিছু বলে না?
কিছু না।
গৃহিণী প্রায় কাঁদিয়া ফেলিলেন—তবে কি হবে? না খেয়ে না শুয়ে এমন করে সমস্তদিন বাগানে ঘুরে বেড়ালে ক’দিন আর বাঁচবে? তোরা বাছা যা হোক একটা বিহিত করে দে—না হলে বাগানের পুকুরে একদিন ডুবে মরব।
বড়বৌ কিছুক্ষণ ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিল, দেখে শুনে একটা বিয়ে দাও; সংসারের ভার পড়লে আপনি সব সেরে যাবে।
বেশ কথা, তবে আজই এ কথা আমি কর্তাকে জানাব।
কর্তা এ কথা শুনিয়া অল্প হাসিয়া বলিলেন, কলিকাল! দাও—বিয়ে দিয়েই দেখ, যদি ভাল হয়।
পরদিন ঘটক আসিল। অনুপমা বড়লোকের মেয়ে, তাহাতে রূপবতী, পাত্রের জন্য ভাবিতে হইল না। এক সপ্তাহের মধ্যেই ঘটকঠাকুর পাত্র স্থির করিয়া জগবন্ধুবাবুকে সংবাদ দিলেন। কর্তা এ কথা গৃহিণীকে জানাইলেন; গৃহিণী বড়বৌকে জানাইলেন; ক্রমে অনুপমাও শুনিল।
দুই-একদিন পরে, একদিন দ্বিপ্রহরের সময়ে সকলে মিলিয়া অনুপমার বিবাহের গল্প করিতেছিল, এমন সময়ে সে এলোচুলে, আলুথালু-বসনে একটা শুষ্ক গোলাপফুল হাতে করিয়া ছবিটির মত আসিয়া দাঁড়াইল। অনুর জননী কন্যাকে দেখিয়া ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, মা যেন আমার যোগিনী সেজেছেন!
বড়বৌঠাকরুনও একটু হাসিয়া বলিল, বিয়ে হলে কোথায় সব চলে যাবে। দুটো-একটা ছেলে-মেয়ে হলে ত কথাই নেই।
অনুপমা চিত্রার্পিতার ন্যায় সকল কথা শুনিতে লাগিল। বৌ আবার বলিল, মা, ঠাকুরঝির বিয়ের কবে দিন ঠিক হ’ল?
দিন এখনো কিছু ঠিক করা হয়নি।
ঠাকুরজামাই কি পড়েন?
এইবার বি.এ. দেবেন।
তবে ত বেশ ভাল বর। তাহার পর একটু হাসিয়া ঠাট্টা করিয়া বলিল, দেখতে কিন্তু খুব ভাল না হলে ঠাকুরঝির আমার পছন্দ হবে না।
কেন পছন্দ হবে না? জামাই আমার বেশ দেখতে।
এইবার অনুপমা একটু গ্রীবা বক্র করিল; ঈষৎ হেলিয়া পদনখ দিয়া মৃত্তিকা খনন করিবার মত করিয়া নখ খুঁড়িতে খুঁড়িতে বলিল, বিবাহ আমি করব না।
জননী ভাল শুনিতে না পাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কি মা?
দেখিয়া শুনিয়া অনুর জননী মনে মনে প্রমাদ গণিলেন—এক বৈ মেয়ে নয়, তার আবার এ কি হইল? জিজ্ঞাসা করিলে সে কি- যে বলে, কেহ বুঝিতে পারে না; ঠোঁটের কথা ঠোঁটেই মিলাইয়া যায়। অনুর জননী একদিবস জগবন্ধুবাবুকে বলিলেন, ওগো, একবার কি চেয়ে দেখবে না? তোমার একটি বৈ মেয়ে নয়, সে যে বিনি চিকিৎসায় মরে যায়।
জগবন্ধুবাবু বিস্মিত হইয়া বলিলেন, কি হ’ল ওর?
তা জানিনে। ডাক্তার আসিয়া দেখিয়া শুনিয়া বলিলেন, অসুখ-বিসুখ কিছু নাই।
তবে এমন হয়ে যায় কেন?
জগবন্ধুবাবু বিরক্ত হইয়া বলিলেন, তা কেমন করে জানব?
তবে মেয়ে আমার মরে যাক?
এ ত বড় মুশকিলের কথা, জ্বর নেই, বালাই নেই, শুধু শুধু যদি মরে যায় ত আমি কি ধরে রাখব?
গৃহিণী শুষ্কমুখে বড়বধূমাতার নিকট ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন, বৌমা, অনু আমার এমন করে বেড়ায় কেন?
কেমন করে জানব মা?
তোমাদের কাছে কি কিছু বলে না?
কিছু না।
গৃহিণী প্রায় কাঁদিয়া ফেলিলেন—তবে কি হবে? না খেয়ে না শুয়ে এমন করে সমস্তদিন বাগানে ঘুরে বেড়ালে ক’দিন আর বাঁচবে? তোরা বাছা যা হোক একটা বিহিত করে দে—না হলে বাগানের পুকুরে একদিন ডুবে মরব।
বড়বৌ কিছুক্ষণ ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিল, দেখে শুনে একটা বিয়ে দাও; সংসারের ভার পড়লে আপনি সব সেরে যাবে।
বেশ কথা, তবে আজই এ কথা আমি কর্তাকে জানাব।
কর্তা এ কথা শুনিয়া অল্প হাসিয়া বলিলেন, কলিকাল! দাও—বিয়ে দিয়েই দেখ, যদি ভাল হয়।
পরদিন ঘটক আসিল। অনুপমা বড়লোকের মেয়ে, তাহাতে রূপবতী, পাত্রের জন্য ভাবিতে হইল না। এক সপ্তাহের মধ্যেই ঘটকঠাকুর পাত্র স্থির করিয়া জগবন্ধুবাবুকে সংবাদ দিলেন। কর্তা এ কথা গৃহিণীকে জানাইলেন; গৃহিণী বড়বৌকে জানাইলেন; ক্রমে অনুপমাও শুনিল।
দুই-একদিন পরে, একদিন দ্বিপ্রহরের সময়ে সকলে মিলিয়া অনুপমার বিবাহের গল্প করিতেছিল, এমন সময়ে সে এলোচুলে, আলুথালু-বসনে একটা শুষ্ক গোলাপফুল হাতে করিয়া ছবিটির মত আসিয়া দাঁড়াইল। অনুর জননী কন্যাকে দেখিয়া ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, মা যেন আমার যোগিনী সেজেছেন!
বড়বৌঠাকরুনও একটু হাসিয়া বলিল, বিয়ে হলে কোথায় সব চলে যাবে। দুটো-একটা ছেলে-মেয়ে হলে ত কথাই নেই।
অনুপমা চিত্রার্পিতার ন্যায় সকল কথা শুনিতে লাগিল। বৌ আবার বলিল, মা, ঠাকুরঝির বিয়ের কবে দিন ঠিক হ’ল?
দিন এখনো কিছু ঠিক করা হয়নি।
ঠাকুরজামাই কি পড়েন?
এইবার বি.এ. দেবেন।
তবে ত বেশ ভাল বর। তাহার পর একটু হাসিয়া ঠাট্টা করিয়া বলিল, দেখতে কিন্তু খুব ভাল না হলে ঠাকুরঝির আমার পছন্দ হবে না।
কেন পছন্দ হবে না? জামাই আমার বেশ দেখতে।
এইবার অনুপমা একটু গ্রীবা বক্র করিল; ঈষৎ হেলিয়া পদনখ দিয়া মৃত্তিকা খনন করিবার মত করিয়া নখ খুঁড়িতে খুঁড়িতে বলিল, বিবাহ আমি করব না।
জননী ভাল শুনিতে না পাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কি মা?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন