''মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রিয় সৃষ্টি মেঘনাদ '',অভিষেক খণ্ডে মহাকবি পরম আদরের ফেবারিট ইন্দ্রজিৎ হয়ে উঠেছেন আদর্শ মানুষ :আলোচনায় - আরিফুল ইসলাম সাহাজি
সমগ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদন দত্ত এক বিশিষ্ট নাম ।মহাকবির কাব্যসত্ত্বার শ্রেষ্টতম বহিঃপ্রকাশ 'মেঘনাদবধ'কাব্য ।উক্ত কাব্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র মেঘনাদ ,মধু কবির মহান সৃষ্টি ।বাংলা সাহিত্যের অনন্য সম্পদ মেঘনাদ ।আলোচ্য অভিষেক খণ্ডে মেঘনাদ অন্যমাত্রা পেয়েছে ।
পাঠ্যটির নিবিড় পাঠে দেখি মেঘনাদ আবির্ভূত হচ্ছেন প্রিয় ভ্রাতা বীরবাহুর নিদারুণ অকাল প্রয়াণের দুঃখ সংবাদ শ্রাবণের মধ্য দিয়ে ।রাজলক্ষ্মী প্রভাষা ছদ্ববেশে যুদ্ধ বিধ্বস্ত লঙ্কার করুন অবস্থা জানালে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন ।দেশ ও জাতির চরম বিপদের দিনে বীর মেঘনাদ আমোদ প্রমোদে মগ্ন থাকায় নিজেকে আত্বধিক্কার দিতে থাকেন বারংবার -
''হা ধিক মোরে ! বৈরিদল বেড়ে
স্বর্ণলঙ্কা ,হেথা আমি বামাদল মাঝে ?''
তিনি তো বাসব বিজয়ী ,সামান্য নর রামলক্ষণকে কিসের ভয় !,প্রবল আত্ববিশ্বাসে তিনি স্ত্রী প্রমীলাকে আশস্ত করে বলেন -
''ত্বরায় আমি আসিব ফিরিয়া
কল্যাণী ,''
তিনি তো শুধু আদর্শ স্বামী নন ,তিনি আদর্শ পুত্রও বটে ।পিতার চরম দুর্দিনে রামচন্দ্রকে সমূলে বিনাশ করবার জন্য প্রিয় পিতার কাছে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি দিতে আহ্বান করেন ।যা তার চারিত্রিক বীরত্বের নিদর্শন।
আলোচ্য পাঠ্য এ বীরত্বের পাশাপাশি মেঘনাদের হৃদয়ের শান্ত ,কোমলভাব আমাদের লক্ষগোচর হয় ।একি সঙ্গে গুরুজনের প্রতি অসম্বব শ্রদ্ধা তাঁর ।ধাত্রী মাতাকে তিনি মাতঃ বলে সম্বোধন করেন ।পিতাকেও যথাচিত্ সন্মান দিয়ে কথা বলবার আগে করজোড়ে পিতৃচরণে প্রণাম করতে দেখি ।পত্নীপ্রেমেও তিনি তুলনাহীন ।তাঁর পত্নীপ্রেমের একটি উজ্জ্বল উদ্ধার -
'' ইন্দ্রজিতে জিতি তুমি ,সতী
বেঁধেছ যে বাধে ,কে পারে খুলিতে
সে বাঁধে ''
লঙ্কায় প্রবেশ করে সংযতভাবে তিনি সেনাপতির দায়িত্ব নিয়ে যোগ্য সন্তানের মত পিতাকে চিন্তামুক্ত করেছেন ।এই দায়িত্ব নেওয়ার মধ্যেই নিজ শক্তিতে আস্থা ,পিতার প্রতি,মাতৃভূমির প্রতি ,নিজ জাতির প্রতি মমত্ববোধ লক্ষ করি ।অসহায় পিতাকে সাহস জাগাতে বীর ইন্দ্রজিত্ উচ্চারণ করেন -
'' থাকিতে দাস যদি যাও রণে
তুমি ,এ কলঙ্ক পিতঃ ঘুচিবে জগতে ....''
এভাবেই ,সমগ্র খণ্ডে মহাকবি তাঁর ফেবারিট ইন্দ্রজিত্কে আদর্শবাদী,নির্ভীক দেশপ্রেমিক এবং নিষ্পাপ করে অঙ্কন করেছেন ॥
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন