দাঙ্গার দিনগুলো - আরিফুল ইসলাম সাহাজি
দাঙ্গার ছবি ॥ |
রক্ত ।রক্ত ।রক্ত পিপাসু হয়ে উঠেছে হায়েনা গুলো ।টেঙ্কি টেঙ্কি রক্ত চাই ওদের ।লাল তাজা রক্ত ।সৌমেনের চিৎকার আজও শুনতে পায় আলামিন ।সৌমেন -শরীফ -মুকুল -দিলীপ - আলাপনরা নৃশংস ভাবে খুন হয়েছে ।ঘৃণার সাথে উচ্চারিত হয় আজ ওদের নাম ।কেউ কোনদিন জানতেই পারবে না কতবড় আত্মবলিদান করে আজ ওরা চির নিদ্রায় ঘুমিয়ে আছে শ্মশান ও কবরে ।
যেদিন সৌমেন বলেছিল কিছু করতে হবে ভাই ।বড় বিপদ আর বসে থাকলে চলবে না ।দাঙ্গা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে ।এক্ষুনি কিছু করতে হবে ।সেদিনের কথা এখনও পরিষ্কার মনে পড়ে আলামিনের ।বদউদ্দিন চাচা খুন হন বামুন পাড়ার মানিক চক্রবর্তীর হাতে ।আগুনে ঘৃতাহূতির মত দাঙ্গার আগুন ছড়িয়ে পড়ল ।মুসলমান পাড়া উত্তাল ।আলামিন খুব ভয় পেয়েছিল সেদিন ভিড়ের মাঝে সৌমেনকে দেখে ।অতি উৎসাহি কিছু মুসলিম যুবক কাফের কাফের বলে সৌমেনের দিকে তেড়ে আসে ।সৌমেনের মুখ আজও দেখতে পায় আলামিন ।সে মুখের অভিব্যক্তি ভাবলেশহীন ।তবে কঠিন দৃষ্টি ।আমাকে মেরে ফেলুন ।তবুও ভায়ে ভায়ে এ রক্তের হোলি বন্ধ করুন ।সৌমেনের সেই করুন আর্তি চোখ বন্ধ করলে আজও শুনতে পায় আলামিন ।
সৌমেনের কথা সেদিন শোনেনি কেউ ।লাশ পড়েছিল অনেক গুলো ।বাতাসে তখন বারুদের গন্ধ।চাঁদ ঢেকে গিয়েছিল মেঘের আড়ালে ।নিজেদের ফায়দার জন্য দাঙ্গা বাধাচ্ছে একটা গোষ্টী তাতে হিন্দুও আছে ,মুসলমানও আছে ।রক্তক্ষয়ী ভায়ে ভায়ে লড়াই বন্ধ করার একটাই রাস্তা ।শেষ করে ফেলতে হবে এই হিংস্র হায়েনাগুলোকে ।অন্ধকারের মধ্যেও কয়েকমাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করা সাত সহপাঠির চোখে আগুন দেখতে পেয়েছিল আলামিন ।আমি তোর সঙ্গে আছি সৌমেন ,মুকুলের কথার সঙ্গে সঙ্গেই আমরাও আছি ।সকলের সেই আত্মহূতির চিৎকার এখনও কানে বাজে আলামিনের ।
সুমন সাধুখাঁ ,রফি মন্ডল ,শীতল মহাজনকে একে একে হত্যা করে আলামিনরা ।মুন্ডুহীন ধর যেমন অসড় , নিস্তেজ ।দাঙ্গার আগুনও নিভতে শুরু করে ।অশুভ শক্তি সর্বদা অসীম শক্তির অধিকারী হয় ।সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি শেষ করা এই তরুণ বিপ্লবীরা তার কতটুকু খবর রাখে ।অমিত ভূঁইয়া বেঁচে থাকতে দাঙ্গা পুরোপুরি থামবে না ।আলামিনের ঘরের ছিটকিনি তুলে দেন আব্বা বছির ।ভুইয়াঁকে মারতে পারেনি সৌমেনরা ।হিন্দু-মুসলিম উন্মাদ জনতার হাতে নৃশংস ভাবে খুন হয় সবাই ।
সৌমেনের মৃত্যুচিৎকার এখনও কানে বাজে ।জানলা দিয়ে সব দেখতে পাচ্ছিল আলামিন।সৌমেনের চোখের ভাষাও পড়ে নিয়েছিল ও ।পাগলামি করিস না ভাই তোকে বেঁচে থাকতে হবে ।আমাদের এই আত্মত্যাগ বিফলে যেতে দিস না ।
রাষ্ট্রপতির হাত থেকে 'পদ্মশ্রী ' নিতে এসে ত্রিশ বছর আগের এক একটা অন্ধকার রাত ডঃ আলামিন জামানকে ঘিরে ধরেছে ।রোজ রাতে আজও সৌমেনরা স্বপ্নে আসে ।উঠে পড় আলামিন ,মানুষ বড় কষ্টে আছে ।ছুটে যান সেদিনের সেই বিপ্লবী তরুণ ।হাঁফিয়ে যান ।আজ তো তিনি বৃদ্ধ ।আমি পারছি না আর , সৌমেন ।মানুষ দাঙ্গা করেই বাঁচে ।দাঙ্গা করেই আনন্দ পায় ॥
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন