অমর একুশে -ওয়াহিদা খন্দকার
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
<!-- babun -->
<ins class="adsbygoogle"
style="display:block"
data-ad-client="ca-pub-8859464621580427"
data-ad-slot="7736028175"
data-ad-format="auto"
data-full-width-responsive="true"></ins>
<script>
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
</script>
বর্ণমালায় চাঁদের দুধ,
বিষম অক্ষর জ্বলে।
বর্ণমালায় বড় হয়ে যাই,
শহীদ দিবস কোলে।
প্রকৃতি থেকে মানুষ প্রত্যেকেরই আলাদা করে বলার ভাষা আছে।ইশারাও একধরনের ভাষা।যা সরাসরি মননে প্রতিভাত হয়।বাংলা ভাষাভাষী অনেকেই জানেন না বাংলা ভাষার জন্য একদিন রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম হয়েছিল।বরকত রফিক শফিকদের কথা হলে অবাক হয়ে শোনে।হ্যাঁ হয়েছিল অনেক কিছু,বাংলা বর্ণমালার লড়াই।রফিক শফিরা নির্দ্বিধায় ঢেলেছিল রক্ত বর্ণমালার গায়ে।পবিত্র হয়েছে বাংলা ভাষা অক্ষরে অক্ষরে।তবে এ মহত্মের কথা যাঁরা জানে না তারাও কি অদ্ভুতভাবে মাতৃভাষাকে ভালোবাসে।শুধু বাংলা কেন অন্য ভাষাভাষী যে কোনো মানুষ নিজের ভাষার জন্য অনেক দূর যেতে পারে।ভাষা এমনই এক মনের খোরাক।মনেপড়ে,হোস্টেলে থাকার সময়,আমার পাশের ঘরে দুজন নেপালি মেয়ে থাকত।বিপদে আপদে আমরা পরস্পরের খেয়াল রাখতাম।ঘরে ভালো রান্না করলে বিনিময়ও হত।তবে ওরা বাংলা বলতে পারত না আর আমিও নেপালিটা পুরো রপ্ত করতে পারিনি।অতএব আমাদের হৃদ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের বন্ধুত্ব সুদূরপ্রসারী হতে পারেনি, শুধুমাত্র ভাষার কারণে।বলার কথাটা হল ভাষা আমাদের জীবনের অনেকবড় প্রশ্রয় ও আশ্রয়।সেক্ষেত্রে ৫২ র ভাষা আন্দোলন বাংলাভাষার অন্ধকার দাগ।
মনেপড়ে ভাষাদিবসের প্রভাতফেরির কথা।রক্তাক্ত বর্ণমালা হাতে নিয়ে হেঁটে যাওয়ার কথা।তখন সবটা বুঝতাম না যেন। " আমি একবার দেখি, বার বার দেখি,দেখি বাংলার মুখ" গানের সাথে এগিয়ে গিয়েও তার অন্তরাত্মা বুঝিনি খুব একটা।আজ আর প্রভাতফেরিতে ফিরি না তবে আজ বুঝি " বাংলা আমার তৃষ্ণার জল,তৃপ্ত শেষ চুমুক"।এখন বাংলার বাইরে বেড়াতে গেলে অন্য ভাষাভাষীর লোকজনের সাথে আলাপ হয়,তাদের প্রথমেই জিজ্ঞাসা করি তিনি বাংলা বোঝেন কি না অথবা কখনো বঙ্গে গিয়েছিলেন কিনা। আবার পাশ দিয়ে কোনো বাংলাভাষীর কথা শুনলেও চমকে উঠি।অতএব অনুভব করি কতটা গভীরে মিশে আছে বাংলা ভাষা শিকড়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে র পর ভারতবর্ষেও কিছু কম হয়নি।এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বলতে পারি,আসামের বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলন।এটা হয়েছিল আসাম সরকারের অসমিয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা করার বিরুদ্ধে।প্রধান বিরোধ ঘটে ১৯৬১ সালের ১৯ মে।ওই দিনে শিলচর,করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে হরতাল ও পকেটিং শুরু হয়।১১ জন প্রতিবাদীকে শিলচরের প্রাদেশিক পুলিশ হত্যা করে।২০মে শিলচরের মানুষ শহীদদের শবদেহ নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন।এই ঘটনার পর অসম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলাকে সরকারী ভাষা হিসেবে ঘোষনা করতে বাধ্য হয়।শিলচর রেলস্টেশন তাই ভাষা শহীদ স্টেশন নামে পরিচিত।উদ্বাস্তু হিন্দুরা কর্ণাটকে আশ্রয় নিলে বাঙালী পড়ুয়াদের বাঙলায় পড়ার ব্যবস্থা ছিল না কর্ণাটকের বাঙালীরা আন্দোলন করায় কর্ণাটক সরকার বাংলাকে দ্বিতীয় ভাষার স্বীকৃতি দেয়।এছাড়াও তৎকালীন বিহার রাজ্যের বাঙালীদের ওপর হিন্দিভাষা চাপিয়ে দিলে বাংলা ভাষা আন্দোলন হয়।ফলত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে নতুন জেলা মানভূম গঠন করতে সরকার বাধ্য হয়।এরকম আরোও অনেক অজানা বিক্ষিপ্ত বাংলাভাষা আন্দোলন হয়ে চলেছে।সেসব আন্দোলনকারী ও শহীদরাও রফিক বরকতদের মতো সমান মর্যাদা ও গুরুত্ব বহন করেন।
পৃথিবীর ৩০ কোটি মানুষের ভাষা হওয়ায় বাংলা ভাষা বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ভাষাগুলির মধ্যে চতুর্থ।ভারত বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত আমার ভাষাতেই রচিত।১৯৫১-৫২ সালে পূর্বপাকিস্তানের বাংলা ভাষা আন্দোলন এই ভাষার সাথে বাঙালির অস্তিত্বের যোগসূত্র স্থাপন করেছিল।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনার মাধ্যমে বাংলাভাষা পৃথিবীর মধুরতম ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে।সবচেয়ে মধুরতম ভাষা আমার বাংলা ভাষা,এটা ভাবতেই গর্বে বুক ফুলে যায়।এভাষার আবেগমিশ্রিতি সুর পাগলপারা।শিশু যখন মা কে মুহুর্মুহু মা ডাকে তখন মনেহয় সত্যিই এর মতো সুমিষ্ট ভাষা আর পৃথিবীতে নেই।ইংরাজি মাধ্যমে পড়া ছেলে যখন জিজ্ঞেস করে ' এটাকে বাংলায় কী বলে গো?' তখন বুঝি কতটা গভীরে আমার প্রিয় বর্ণমালা! কত শক্তি এ অক্ষরসমষ্টির।গভীর থেকে উঠে আসে----
আঙুলে খেলে বিশ্বপিপাসা
বর্ণমালার আতর
নোঙর ফেলেছি স্বপ্ন বাসা
মা'র আঁচলে কাতর।
মাতৃভূমি ফুলের মতো আর তার সুবাস হল মাতৃভাষা।মায়ের ভাষার আশ্রয়েই একটি জাতি সুগঠিত হয়,বিকশিত হয়।আমাদের আশা, ভালোবাসা,কল্পনা আবেগ সমস্ত কিছু রূপায়িত হয় মাতৃভাষার মাধ্যমে।এই ভাষাকে যখন কেউ কেড়ে নিতে চায় তখন আমাদের উচিত সর্বশক্তি দিয়ে, প্রাণ দিয়ে তাদের প্রতিহত করা।অমর একুশে তারই সাক্ষী।বরকত রফিকরা, শিলচর ও আরো অন্যান্য জায়গায় ভাষা আন্দোলনের শহীদরা যথার্থই মায়ের ছেলে,মাতৃভাষা প্রকৃত পূজারী। আমরাও মাতৃভাষার কাছে,মায়ের কাছে শপথ নিতে পারি,তাঁর সম্মান রক্ষার-----
তোমার বুকের শহীদ শিকল
নতজানু হয়ে কাটবো সকল
বিবাগী বাউল ঘরে মা তোলো
রঙিন আলোর দুয়ার খোলো
২১ শে ফেব্রুয়ারিতে পৃথিবীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশসহ সকল জাতিই তার মাতৃভাষাকে রক্ষার ও তার ঐতিহ্য বহন করার দৃঢ় শপথ গ্রহন করে।এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা সুপরিচিত ও গর্বিত হই।১৮৮ টি দেশে যখন মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়,সবাই যখন শ্রদ্ধাভরে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে তপখন সত্যিই নিজেকে ধন্য মনে হয়।শহীদরা আমাদের পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বের সম্মানজনক স্থানে।সার্থক হয়েছে তাদের রক্তদান।
তবে বর্তমানে বাংলাভাষার অবস্থা করুণ। নিজের বাড়িতে মা গৃহবন্দিনী। তার গায়ে এখন কলঙ্ক।একসময় পাকিস্তান সরকার বলেছিলেন,বাংলাভাষা সাহিত্যের ভাষা কিন্তু কাজের ভাষা নয়।এতদিন পরে আজ সেকথা যেন নীরবে উচ্চারিত। ফেব্রুয়ারি এলে আমরা মায়ের যন্ত্রণায় কাতর হই।মাসটা কেটে যেতেই সব ভুলে গিয়ে ভাষাদূষণে মত্ত হই।।শুধু ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস পালন করলে কি এ অবস্থার উন্নতি ঘটবে,বাংলাভাষা কি হয়ে উঠবে আমাদের যথার্থ মাতৃভাষা?শুধু গৌরবান্বিত হয়ে লাভ নেই বরং কলঙ্ক মোচনে সক্রিয় হয়ে উঠতে হবে।অতএব এ সময়েও আমাদের পা মেলাতে হবে আরেক বাংলাভাষা আন্দোলনে।তবেই শহীদদের যথার্থ সম্মান জানানো হবে।তাহলেই আমরা মাতৃভাষার প্রকৃত সন্তান হয়ে উঠতে পারবো।
আঙুল ছেড়ো না মা
নিয়ে চলো জয়পথে
বর্ণ ওমে জড়িয়ে রাখো
কাঁচা সোনা হাতে।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন