ঈদের রীতি নীতি , সার্বজনীনতা, ও মানবজীবনে ঈদের প্রভাব - আলোচনা করেছেন আরিফুল ইসলাম সাহাজি
ঈদ মানে খুশি , ঈদ মানে হৃদয়ের বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস । ৩০ দিবসের কঠোর অধ্যবসায় , তপস্যার শেষে গগনে এক ফালি চাঁদ উঁকি দেওয়ার সাথে সাথে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে মন ভ্রাতৃত্ববোধ আর সৌহার্দ্যতার মায়াবীবন্ধনে । আজ কে আছিস শত্রু , কে আছিস বন্ধু আয় গলে মিলে । কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই লিখেছেন , ' রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ ' । সর্বঅর্থেই ঈদ মহান আল্লাহতলার পক্ষ হতে মানবজাতির জন্য এক শ্রেস্ঠ উপহার । হাদীসে উল্লিখিত আছে , মহামানব হজরত মুহাম্মদ স. মক্কার বিধর্মীদের অত্যাচারে অতিস্ট হয়ে মদিনা গমন করেন । সেখানে মদিনাবাসীকে তিনি দুটি অদ্ভুত ধরনের উৎসব পালন করতে দেখেন , যেগুলি জাহিলিয়াতের যুগ থেকে পালিত হয়ে আসছে । মুহাম্মদ স. বললেন -' আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দুটি দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন , একটি হলো ঈদুল ফিতর এবং অপরটি হলো ঈদুল আযহা ' ' (আবু দাউদ , হাদীস নং ৯৫৯ )
ঈদের স্বরূপ :অর্থ
<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<!-- babun -->
<ins class="adsbygoogle"
style="display:block"
data-ad-client="ca-pub-8859464621580427"
data-ad-slot="7736028175"
data-ad-format="auto"
data-full-width-responsive="true"></ins>
<script>
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
</script>
ঈদ শুধুমাত্র কোন বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ দ্বারা প্রবর্তিত উৎসব নয় । বরং এটি সমগ্র আদম সন্তানদের জন্য এক বিশেষ উপহার । পবিত্র এই উৎসব উৎযাপনের মধ্যে দিয়ে এক অনাবিল আনন্দে ভরে সেজে ওঠে বিশ্ব সংসার । সৌভাতৃত্ববোধের পরকাস্টায় জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মেতে ওঠে ঈদের আনন্দে । বিলাসবহুল জীবনের আস্ফালন দেখানো কিম্বা লাকচা , সিমাইয়ের এলাহী আয়োজন ঈদের স্বরূপ নয় ।ঈদ আসলে মিলনের উৎসব । জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মিলনের শিক্ষা দেয় ঈদ ।
' ' তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম '
অর্থাৎ , আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের ইবাদাত বন্দেগী কবুল করুন । সেদিক থেকে বিচার করলে , ঈদ উৎযাপনের মধ্যে দিয়ে বলিস্ট হবে আত্মার বন্ধন , অন্যদিকে ঈদ যাপনের মধ্যে দিয়ে মানব পৌঁছাবে স্রস্টার নিকটে ।
ভাল পোশাক ও ভাল খাবারের আয়োজন করা উত্তম :
ঈদ উপলক্ষে সমর্থনুযায়ি ভাল পোশাক পরিধান ও উত্তম খাবারের আয়োজন করবার কথা বলা হয়েছে । তবে , সেটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না পৌঁছায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে । অর্থাৎ অপচয় একেবারেই কাম্য নয় । একইসঙ্গে , আত্মীয় পরিজন , আপন - পর মিলে মিশে ঐক্য বদ্ধ , যুথবদ্ধ হয়ে ঈদ উৎযাপনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ সমূহে ।
ঈদের নামাজ :
ঈদুল ফিতরে ফিতরা আদায়ের পর নামাজ পরা উত্তম । ফিতরা হলো সমর্থবান মানুষের উপর হতদরিদ্র মানুষের হক । ইসলাম সার্বিক অর্থেই কল্যানের ধর্ম । ঈদের খুশিতে শুধুমাত্র বিত্তবান ও মাধ্যমবর্গের মানুষগন আনন্দে মাতোয়ারা হবে ইসলাম তা মান্যতা দেয়নি । বরং ঈদগাহে উঠবার পূর্বে দুস্থ মানুষদের একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ প্রদান করতে বলা হয়েছে , যাতে তাঁরাও ঈদের আনন্দে নিজেদেরকে সামিল করতে পারেন । এটিই ফিতরা । অন্যদিকে ঈদুল আযহার নামাজ তাড়াতাড়ি পড়া উত্তম এবং সুন্নত ।
গোসল ও পবিত্র পরিচ্ছন্নতার বিধান জরুরি
ঈদের নামাজে শরিক হবার পূর্বে নিজের শারীরিক পবিত্রতা অর্জন করতে হবে । আতর , সুরমা সহযোগে সবচেয়ে উত্তম পোশাক পরিধান করে আত্মীয় পরিজন , আপন - পর ঐক্যবদ্ধভাবে ঈদগাহ ময়দানে যাবার বিধান রয়েছে । পুরুষের পোশাকের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে , পোশাক টাখনূর থেকে উপরে পড়তে হবে । (এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করলে অপ্রাসঙ্গিক হবে না , সম্প্রীতি গবেষনায় আবিস্কৃত হয়েছে কাপড় টাখনুর নিচে পরলে তা দেহের জন্য বিপদজ্জনক )। নারীদের পোশাক সর্বাঙ্গে আবৃত থাকবে । রূপ সৌন্দর্য পরপুরুষের নিকট উপস্থাপন করা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে । সূরা নূরের ৩১নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা ঘোষনা করেছেন -
'' তারা (মহিলাগন ) তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না তাদের স্বামী , পিতা .... ছাড়া অন্যের নিকট । ' '
ঈদের মাঠে যাবার আগে কোন কিছু খাওয়ার বিষয়
ঈদুল ফিতর অর্থাৎ রোজার ঈদে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া সুন্নত । হজরত আনাস রা. বলেন -
' ' নবী (মুহাম্মদ স.)ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটা খেজুর না খেয়ে ঈদের মাঠে যেতেন না ' ' , অনুরূপ , ঈদুল আযহার দিন তিনি খালি পেটে ঈদগাহে গমন করতেন ।
পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়ার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে
বুখারীর ৯৩৩ নং হাদীসে উল্লেখ আছে ' ' পায়ে হেঁটে ঈদগাহ গমন করা এবং অন্যপথে ফিরে আসা সুন্নত । ' '
ঈদের নামাজপর্ব
ঈদের নামাজ দুই রাকাত (বুখারী হাদীস নং ১৩৪১) । ঈদের খুতবা সম্পর্কে মহামতি মুহাম্মদ স. বলেছেন , যে চলে যেতে চাই সে চলে যেতে পারে , আর যে বসতে চাই সে বসতে পারে ।
ঈদ ও সামাজিক জীবন
ঈদ মূলত মিলনের মহান উৎসব । ঈদের পবিত্রতায় মানবজীবন পরিপূর্ন হয়ে ওঠে পরম মমতায় , উদারতায় । আত্মীয় - পর , প্রতিবেশী , শত্রু - বন্ধু , জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মিলনের উৎসব হলো ঈদ । ধর্মীয় বাতাবরণের বাইরে ঈদের সার্বজনীন গুরুত্ব প্রশ্নাতীত । ঈদ শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের শ্রেস্ঠ উৎসব নয় , সমস্ত মানব সমাজের জন্য আল্লাহর এক মহান নিয়ামত । ঈদের তাৎপর্য্য এখানেই , ঈদের দিন তাই রহিমের বাড়ি রামের অবিরত যাতায়াত । তবে , একটু গভীর ও অনুসন্ধানী দৃস্টিতে ভাবা দরকার । ঈদের সার্বজনীনতা কি ব্যাহত হচ্ছে কিছুটা এইসময় ! সমগ্র বিশ্বপ্রেক্ষাপটে ঠিক এই মুহূর্তও ইসলাম ধর্ম এবং ধর্মানুরাগিরা কিছুটা বিপাকে রয়েছেন , এটা চরম ইসলাম বিরুদ্ধ মানুষ ও স্বীকার করবেন । এই বিপাক ঈদের সার্বজনীনতাকে কিছুটা ম্লান করে তুলছে । বড়দিন খিস্টান ধর্মের এক পবিত্রদিন । বিশ্বভুবনের অধীশ্বরদের সঙ্গে পুরো পৃথিবী জুড়ে তা সাড়ম্বরে পালিত হয় । সেদিক থেকে বিচার করলে ঈদ অনেকটাই শুধুমাত্র মুসলমানদের উৎসব হিসাবে রয়ে গেছে । নেপথ্যে এক বা একাধিক কারন রয়েছে । প্রথমত , বর্তমান বিশ্ব বড়বেশি ওয়েস্টার্ন কালচার , রীতি নীতিতে আসক্ত , যা অনেকক্ষেত্রেই ইসলামি দৃস্টিকোন থেকে অচ্ছুৎ । অপরদিকে ইসলামকে বিপদজ্জনক মতাদর্শ হিসাবে তুলে ধরবার চেস্টা ঈদের সার্বজনীনতার পক্ষে প্রতিবন্ধক হয়ে উঠছে । এত সত্ত্বেও একেবারে জোর গলায় বলা যায় ঈদ আপামর বাঙালির এক পবিত্র মিলনের দিন । সেদিন আত্মা ভরপুর থাকে মমতায় , সৌভাতৃত্বর পবিত্র বন্ধনে । আয় ভাই গলে মিলি , আজ মিলনের দিন । আজ ঈদ । ।
লেখক পরিচিতি
আরিফুল ইসলাম সাহাজি
এম .এ( বাংলা )প্রথম শ্রেনী , বিএড
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন