বিভেদ - বৈষম্য নয় ! সর্বরকম অসাম্যের বিপক্ষে হোক কলরব । । আরিফুল ইসলাম সাহাজি
সবরকম অন্যায়ের বিপক্ষে সমান কলরব হওয়া উচিৎ । সবক্ষেত্রেই মানবিকতার সলতে দানা বাঁধতে পারছে না । বিভেদের এক শক্তপাশা আমাদের হৃদয়কে শৃঙ্খলযুক্ত করে ফেলেছে । সংবাদপত্রে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হত্যা ,ধর্ষণ , লুঠের খবর পড়লে আগে নামটার দিকে উঁকি মারি । যদি মার খাওয়া ধর্মের (একটি বিশেষ ধর্মের মানুষ অর্থে ),কিম্বা মার জাতির হয় (সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় নিচুজাতি মনে করেন , পড়ুন দলিত ), তাহলে দরকার নেই । কোথায়ও কোন স্টেটাস দেওয়ার দরকার নেই । বরং বিপক্ষে স্লোগান রেডি হোক কয়েকটা (হে মানবদরদী আপনাকে বলিনি । আপনার হৃদয় যদি মার খাওয়া মানুষগুলোর জন্য কাঁদে , তাহলে আপনি এর বাইরে )।পারলে জাতীয় পতাকাটাও সঙ্গে নিও ভায়া ! ধর্ষকের ধর্মটা কি ? ওরে বস ! উনি আমাদের লোক । হোক রাস্তা অবরোধ , ক্ষতি কি ? পোড়াও হাজার দোকান । আদিখ্যেতা দেখো ! সামান্য একটা দারিদ্য মজুরকে মারা কি এমন পাপের কাজ হে ! দাও ওই খুনে বীরকে ভোটের টিকিট ।
কেমন জানোয়ার হয়ে উঠছি আমরা । অমানুষ এক একটা । খুনির আবার ধর্ম কিরে ! ধর্ষকেরই বা কিসের ধর্ম ! ধর্মকে আজ বর্ম করতে পারছি না আমরা । ফায়দা লুঠবার কৌশলে পরিনত করে ফেলছি ক্রমশঃ । রাজনীতির পাশা এখন অন্যরকম । ছাড় তো উন্নয়ন ! ধর্মই বাজি এখন । ভাগ্য বদলানোর হাতিয়ার । রাজনীতির উর্দ্ধে যার স্থান । বাবাদের বেজায় কদর এখন । অমর্ত্য সেনরা এখন প্রায় অচল ছোট একটাকা । তাই বাবারা ধর্ষণ,খুন যায় করুন , সব ছাড় । জামিন পান খুব সহজে ।
দেশের রাজকোষে মা ভবানী । মাকড়সার জাল । হু হু করে বাড়ছে প্রয়োজনীয় দ্রব্যর দাম । ডলারের তুলনায় নামছে টাকা । অভুক্তদের সংখ্যা বাড়ছে জোরকদমে । মধ্যবিত্তরা গিয়ে দাঁড়িয়েছে খাদে । তেল , গ্যাস কিনতেই ফতুর সব ।কোথায় গেল দেশীয় সম্পদের পাহাড় ! আদানি , আম্বানি , নীরববাবুদের পকেটে । এতকিছুর পরেও প্রতিবাদ কই ? নেই । উনারা সব নামীমানুষ , তাছাড়া মার খাওয়া পার্টির লোকও নই ! এতএব সীমিত স্তরে প্রতিবাদ । তারচেয়ে লাভজেহাদ নিয়ে হয়ে যাক একগেম ।
<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<!-- babun -->
<ins class="adsbygoogle"
style="display:block"
data-ad-client="ca-pub-8859464621580427"
data-ad-slot="7736028175"
data-ad-format="auto"
data-full-width-responsive="true"></ins>
<script>
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
</script>
আসামে বাংলাভাষীমানুষ সব টাইট হয়ে গেছে । প্রথম দিকে বলা হচ্ছিল বাতিল চল্লিশলাখ মারখাওয়া পার্টির সদস্য (একটি বিশেষ ধর্মের মানুষ ) । তেমন কোন কলরবই হচ্ছিল না । ফেসবুক , হোয়াটসঅপ সব জায়গাই কানাঘুষি চলছিল , যাক জব্দ হয়েছে বেজায় সব । বাতিল পার্টির লোকজন নিজেদের সামর্থ্যনুসারে সীমাবদ্ধভাবে প্রতিবাদ , প্রতিরোধ করছিলেন । গ্রামগঞ্জ থেকে লোকজন নিয়ে কলকাতার রাস্তা জ্যাম করে ছাড়ছিলেন । যা পারে করুক , গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই । বরং ফূর্তিতে ছিলেন অনেকেই ( সবাই নই । হে মানবদরদী আপনি এর বাইরে )ভাংয়ের নেশা ভাঙলো তখন , যখন দেখলো চল্লিশের মধ্যে আমরাই অধিকাংশ । হোক , হোক কলরব । এবারে জমে উঠল । জেগে উঠল বাংলাপ্রীতি । মেতে উঠল আমজনতা । টনক নড়ল সবার । সম্প্রতি আসামে পাঁচজন বাংলাভাষী মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে । যা অত্যন্ত নিন্দনীয় । প্রসঙ্গত একটি বিষয় বলা প্রয়োজন , আসামে বাংলাভাষী মানুষদের উপর এটাই কিন্তু প্রথম গনহত্যা নয় । আগেও চোরাগোপ্তাভাবে বাংলাভাষী মানুষকে হত্যা করা হয়েছে । ঘরবাড়ি , জমিজমা থেকেও বেদখল করা হয়েছে । আমরা একটু পিছনে ফিরলে , ২০১২ সালের জুলাই মাসের নির্মম নিষ্ঠুর গনহত্যার কথা স্মরনপটে চিত্রিত হয় । স্থান আসামের কোঁকড়াঝাড় । ১০০ জনের বেশি বাংলাভাষী মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় । সেটাও কিন্তু ভাষাগত বিদ্বেষজনিত কারনেই । গৃহহীন হন ২৮০ টি গ্রামের প্রায় সাড়ে তিনলক্ষ অসহায় মানুষ । আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় তাঁদের ঘরবাড়ি , কেড়ে নেওয়া হয় জমি জমা , বেঁচে থাকার সম্বল । শেষপর্যন্ত তাঁদের স্থান হয় অস্থায়ী শিবির সমূহে । এবার , ২০১৪ সালের একটি ঘটনার উল্লেখ করি । এটিও গনহত্যা । শিকার বাংলাভাষী মানুষজন । ১ লা এবং ৩রা মে আসামের বাকসা এবং কোঁকড়াঝাড় জেলায় পর পর দুটি নির্মম গনহত্যা সংঘটিত হয় । প্রান হারান ৫০ জন নিরীহ বাঙালী । আহত হন শতাধিক । ভাবছেন সেদিন , অর্থাৎ ওই কালো দিনগুলোতেও গর্জে উঠেছিল বাঙালির বিবেক । তর্জন গর্জনও করেছিল হয়ত খুব । হা তথ্যগত আপনি ঠিকই ভাবছেন , কেননা পাঁচজনের অধিকই হন একশোজন । দুর্ভাগ্য সেদিন কিন্তু তেমন প্রতিরোধ , প্রতিবাদ সংঘটিত হয়নি । নিহতরা সকলেই ছিলেন বাংলাভাষী মুসলমান । ভাবছেন ধর্মে ইসলাম হলেও কি ? আঘাত তো বাংলাভাষার উপর ! অবাক লাগলেও সত্য ধর্মই এখন আমার আপনার একমাত্র পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । আপনি কেমন ব্যবহার পাবেন সেটা নির্ভর করছে , আপনার ধর্মবিশ্বাসের উপর । যেকোন মৃত্যুই দুঃখজনক । সম্প্রতি পাঁচজন বাংলাভাষী মানুষের গনহত্যাকে ধিক্কার জানবার মত ভাষা নেই । এর বিরুদ্ধে সর্বস্তরে যে প্রতিরোধ , প্রতিবাদ সংঘটিত হচ্ছে তা আশাব্যঞ্জক । জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলেই আসবে মুক্তির সোপান ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন