ইসলাম ধর্মে অর্থযোগ সামান্য হলেও একদল অর্থলোভী মৌলবির ঈর্ষণীয় প্রভাব রয়েছে মুসলিম সমাজে । । আরিফুল ইসলাম সাহাজি




ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করার রীতি সুপ্রাচীন । যুগে যুগে যেমন ধর্মাবতার আবির্ভূত হয়েছেন , তেমনি ধর্মকে বিপথে চালিত করবার জন্য সূর্য্যের মত দীপ্তি নিয়ে প্রকট হয়েছেন ধর্ম ব্যবসায়ীগন । নিজ ধর্মের ধারক হিসাবে তাঁরা স্বঘোষিত হলেও ধর্ম এবং স্বগোত্রের মাঝে কোনরুপ হিতকর কর্মকান্ডের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখতে তাঁরা বিশেষ আগ্রহী নই । নিজস্ব পেটপুজো , যশ , রাজনীতিক সুবিধা পাওয়ার আশাই তাঁরা বিমোহিত থাকেন । ভিতরে ভিতরে এই সমস্ত ধর্মব্যবসায়ীগন ভক্ত বাড়ানোর নোংরা খেলায় লিপ্ত হয় । অর্থাৎ যার যত বেশি ভক্ত , সে তত বড় বাবা । অনেকটাই মধ্যযুগীয় সেই এক হাজারী , পাঁচ হাজারী মনসবদার পদমর্যদার মত । কার্যত নেপথ্য থেকে এ সমস্ত বাবাজি গন অনেকক্ষেত্রেই দেশীয় সংস্কৃতির দিশা দেখানোর কাজ করেন । অর্থাৎ কে কী খাবেন ? কেমন জীবনাচরণে মগ্ন হবেন , সব কিছুই বাতলান আমাদের পরম পূজনীয়  বাবাজিগন ।সিনেমাতে বেশ কয়েকবছর ধরে একটি শব্দ বিশেষভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে , সাহসী অভিনেত্রী , সাহসী অভিনেতা । বোঝার স্বার্থে বিষয়টি গিঁট খুলে উপস্থাপন করা যাক , অর্থাৎ যে অভিনেত্রী যত বেশি কাপড় খুলবেন , তিনি তত বেশি সাহসী অভিনেত্রী , সাহসী অভিনেতা । প্রশ্ন উঠতে পারে আপনাদের মনে , ধর্মব্যবসায়ীদের আলোচনায় হঠাৎ সাহসী অভিনেত্রীদের উপস্থাপনা কেন ? উত্তরে বলি , বর্তমান সময়ে দেখেছেন হয়তো , একদল কাপড় ছাড়া বাবার উল্লেখ্য উপস্থিতি , অনেকে আবার পার্লামেন্টে পৌঁছে ভাষণও দিচ্ছেন । অনেককে আবার ধরে এনে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হচ্ছে । অর্থাৎ কাপড় পড়া বাবাদের তুলনায় কাপড় ছাড়া বাবাদের এখন বেশি কদর । মোদ্দা কথা এখন বাবারা  সংস্কৃতি এবং দেশীয় রাজনীতিক পরিমিতির প্রধানতম পৃষ্টপোষক ।

<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<!-- babun -->
<ins class="adsbygoogle"
     style="display:block"
     data-ad-client="ca-pub-8859464621580427"
     data-ad-slot="7736028175"
     data-ad-format="auto"
     data-full-width-responsive="true"></ins>
<script>
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
</script>

শুধু , বাবাদের কথা বলবো অথচ মোল্লাদেরকে আড়াল করবো , তাহলে লেখাটির  নিরপেক্ষতা বিলুপ্তি ঘটবে । ইসলাম ধর্মে বাবা নেই , তবে এক ধরনের অর্থলোলুপ মোল্লাদের ঈর্ষণীয় প্রভাব রয়েছে । যেহেতু অর্থলোলুপ শব্দবন্ধখানি ব্যবহার করা হচ্ছে , উক্ত শব্দখানি কেন ব্যবহৃত হলো , এ বিষয়ে গোঁড়া ধর্মান্ধগন জবাবদিহি চাইতে পারে । ভাবের ঘরে  শান দেওয়ার পূর্বে অর্থলোলুপ শব্দবন্ধটির উপস্থাপনের হেতু ব্যখ্যা করে নিই , বর্তমান সময়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মীয় জলসার সংস্কৃতিক প্রভাব মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে । প্রায় প্রতিটা গ্রামে খুব কম হলেও চার পাঁচটি জলসা হয় এখন । জলসাকে কেন্দ্র করেই আসর জমিয়ে বসে দোকানদাররা । আমন্ত্রিত মৌলানারা উচ্চনদের ডাক ছাড়েন বেহেস্তের ( স্বর্গ )বাগানে এসে বসুন , দোকান পাঠে ঘোরাঘুরি করবেন না । প্রায় সর্বত্রই তাঁর আহ্বান বিফল হয়  । জলসার মাহফিলে গুটিকয়েক সত্যিকারের ধর্মভীরু মানুষ থাকেন , বাজারে থাকেন কয়েক হাজার । সুতরাং অমৃত ধর্মবাণী শুনবার অভিলাষে ধর্মীয় জলসার উপস্থাপন করা হলেও অনেকাংশে তা মেলায় পরিণত হয় । আক্ষেপের বিষয় , কোন আমন্ত্রিত মৌলানা বলেন না , ধর্মীয় জলসা এবং মেলা প্রতিশব্দ নয় , যেকোন একটি বেছে নিন । এমন করলে আমাকে আর আমন্ত্রণ করবেন না ।এবার অর্থলোলুপ শব্দবন্ধটির সার্থক মূল্যায়ন উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন । তিনি বলেন না , হয় ধর্মীয় জলসা দিন ,  নয়তো মেলা । কেন বলেন না জানেন ! বললে তাঁর নিমন্ত্রণের ডায়েরি কয়েকটি পাতা খালি রয়ে যাবে যে । আরও তো অনেক মৌলানা আছে , তাঁরা বলুক না । আসলে তিনি স্বঘোষিত ধর্মের ধারক হলেও সত্যকার ধর্মপ্রীতির লক্ষণখানি প্রহেলিকার চাদরে জড়িয়ে রইল । অর্থ , লোভ , যশকেই তিনি প্রধান্য দিলেন । সত্যই তো লোক ধর্মীয় জলসা না শুনলে তিনি করবেন টা কী ? 

আগেই উল্লেখ করেছি , একটি গ্রামে কম করে হলেও এখন চার থেকে পাঁচটি ধর্মীয় জলসা হয় । একটি ধর্মীয় জলসার খরচ প্রায় লক্ষাধিক । খরচের বিষয়টা খোলসা করা নিই , না তো উপস্থাপিত বিষয়ের খেই হারিয়ে যেতে পারে । একটি জলসাতে এখন কম করে চারজন হুজুর থাকেন । সবাইই আল্লাহ , আল্লাহের রসুল নিয়ে আলোকপাত করবেন । তবুও , হুজুরদের মর্যদার উপর নিচ ভেদ আছে , পারিশ্রমিকের তারতম্য আছে । কেউ উচ্চ  মর্যদাবান হুজুর  , কেউ বা মাঝারি মাপের   , বাকিরা সব জেনারেল কাস্টের । উচ্চ  মর্যদাবান হুজুরদের কদর সবচেয়ে বেশি । তারপর মাঝারি মাপের হুজুরদের কদর আর জেনারেল হুজুরদের কদর তেমন নেই বললেই চলে । যাদের বাজেট কম তারা উচ্চমর্যদাবান ও মাঝারি মাপের হুজুরদের পাশাপাশি জেনারেল হুজুরদের আনেন ধর্মীয় জলসাই বৈচিত্র আনতে । ভাবস্রোতে আরও একটু গতি দেওয়ার পূর্বে নিজের অবস্থান আর একটু পরিস্কার করে নিই , ধর্মীয় জলসার বিপক্ষে আমার অবস্থান নয় । অর্থলোভী কিছু মৌলানার বিরুদ্ধে আমার লেখ্যভূমির কষাঘাত । যাঁরা ধর্মটাকে ব্যবসার জায়গাতে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন । মাত্র একঘন্টা ধর্মীয় জলসা করবেন , অনেকে আবার তাও করেন না , তারপরও জলসা কমিটিকে দিতে হয় ১৫/২০ হাজার টাকা । তিনি আবার একই সঙ্গে তিন তিনটে জলসায় আমন্ত্রিত । অর্থাৎ এক রাত্রে তিনটে জলসা , সব মিলিয়ে ১৫ হাজার করে ধরলে ৪৫ হাজার । আপনি বলতে পারেন তাতে আপনার কিসের ক্ষতি ! আমার কোন সমস্যা নেই , একদল দিচ্ছে , আর একদল নিচ্ছে এটা তাদের ব্যপার । কিন্তু সমস্যা বাধে তখন যখন ২০ হাজারী হুজুর একটি বিতর্কিত কথা বলে বসেন ,ভক্তদের মাঝে দল বিভক্ত হয়ে রক্তক্ষয়ী অবস্থা তৈরি হয় সেই সময় । যদিও ইসলাম ধর্মের ভিতরের বিষয়গুলো সম্পর্কে খুব বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারেনি , তবুও যতটুকু জানি তাতেই গলা ছেড়ে বলতে পারি , ইসলাম ধর্মের সঙ্গে অর্থের এমন হ্যাংলাপোনা একেবারেই বেমানান , অসামঞ্জস্যপূর্ণ । ইসলামী ইতিহাসের ঘটনা পরস্পরার যে শিক্ষা পেয়েছি সেগুলোতে দেখেছি ধর্মের সত্যকারের সাধকগন রাজপ্রাসাদ , অট্টালিকা ছেড়ে গেছেন সত্য সন্ধানে । নবী মুহাম্মদ স. এর যে জীবনকথা আমরা পড়েছি , সেখানে দেখা যায় তাঁর জীবদ্দশায়ই ইসলামী সম্রাজ্য অর্ধপৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল । মুহাম্মদ স. অর্ধপৃথিবীর অধিশ্বর , অথচ তাঁর জীবনচক্রের দিকে অভিনিবেশ করলে দেখতে পাই এক নির্মোহ ঋষির জীবনাচরণ । দিনের পর দিন অর্ধপেটে , কোন কোন দিন না খেয়েও কাটিয়েছেন । কিসের অভাব ছিল তাঁর ? বায়তুল মাল (ইসলামী সম্রাজ্যের রাজকোষ )তখন সম্পদের পাহাড় । তিনি চাইলে কী তা গ্রহন করতে পারতেন না । কিন্তু তিনি দুনিয়া চাননি , তিনি চেয়েছিলেন আখেরাত (মৃত্যুর পরবর্তী কাল )।খুব বেশি ইসলামী শাস্ত্রে জ্ঞানী না হলেও নবী মুহাম্মদ স. এর  জীবনকথা থেকে এটুকু প্রমাণ হয় , অর্থই অনর্থের কারণ ।অন্ততঃ ইসলাম ধর্মের সঙ্গে অর্থের যোগ খুব বেশি নেই । বরং বলা হয় , একজন ধনী মানুষের অনেক আগেই একজন গরীব মানুষ বেহেস্ত (স্বর্গ )লাভ করবেন । 


বড় বড় যেসমস্ত হুজুর আছেন তাদের বাড়ি ঘর গুলো দেখলে মনে হবে তাজমহলের আদলে তৈরি । আপনি বলবেন , তাতে আপনার সমস্যা কী ? আমার কোন সমস্যা নেই । যার টাকা আছে তিনি তাজমহল কেন বুর্জ খলিফার থেকেও বড় বাড়ি বানাক না সেটা তাঁর একান্ত নিজস্ব ব্যপার । তবে সমস্যা বাধে তখনই , যখন সেই তিনিই ধর্মীয় জলসায় এসে বলেন , কবর তো মাটির , কী হবে ভাই ঘরবাড়ি । ভীষণই অবাক হয় , আমাদের জন্য এক আর উনার জন্য আল্লাহর নিয়ম আলাদা নাকি ? এবার আসুন মুসলিম সমাজে প্রবল প্রচলিত নজরানা সংস্কৃতির দিকে আলোকপাত করা যাক , 
হুজুরকে নজরানা দেওয়ার একটা সংস্কৃতি এখন চালু আছে মুসলিমদের মধ্যে । অর্থাৎ কিছু অর্থ , সম্পদ দিয়ে হুজুরকে খুশি করা । খুশি হলেই হুজুর আপনার মাথায় হাত বোলাবেন , ফুঁ দেবেন । আমার অনেক বন্ধুরা পরীক্ষা স্বরুপ , টাকা পয়সা ছাড়াই হুজুরের সঙ্গে মোসাফা করেছে । তাঁদের কাছে যতটুকু শুনেছি , তাতে যাঁরা টাকা দিচ্ছেন সেই ভক্তদের জন্য যেমন স্পেশাল ফুঁ , যাঁরা টাকা দিচ্ছে না , তাঁদের জন্য রেডিমেড ফুঁ । বুঝি না , বাড়ির পাশের প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেকেই ক্যন্সার সহ অন্যন্য দুর্জ্ঞেয় ব্যধিতে আক্রান্ত , অর্থের জন্য চিকিৎসা হচ্ছে না , আবার অনেক কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা রয়েছেন যাঁরা পনের টাকা জোগাড় করতে পারেন না , অনেক দরিদ্য মানুষ আছেন যাঁদের ক্ষুধার চোটে চোখ ফেটে জল নামে তাঁদেরকে এক পয়সা সাহায্য করি না । অথচ হুজুরের হাতে গুঁজে দিই পাঁচ ' শ , হাজারের কড়কড়ে নোট । হুজুর কী ভিখারি নাকি ? হুজুরের এত টাকার কিসের দরকার ? সত্যকার দরকার আমার প্রতিবেশী ওই সমস্ত অসহায় মানুষগুলোর অর্থের অভাবে যাঁদের কাছে পূর্ণিমার চাঁদ মনে হয় ঝলসানো রুটি । আমরা কবে বুঝবো এই সত্যবাক্যখানি । কবে বুঝবো ইসলামে সঙ্গে অর্থের যোগ  সমান্যই  , আবার অর্থলোভী মানুষও কখনও ধর্মের ধারক নন । অন্ততঃ , ইসলাম ধর্মের পয়গম্বর , খলিফা , পীরদের দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে । তাঁরা কেউ অর্থের পিছনে পাগলের মত ছোটেন নি , বরং অর্থের মোহ থেকে ছুটে পালিয়েছেন । আপনার তো দরকার , ইসলামী শাস্ত্রজ্ঞান , সেজন্যই তো ধর্মীয় জলসার আয়োজন । সেজন্য মসজিদের ইমাম সাহেব এবং অন্যন্য অল্প কয়েকজন বক্তা  আছেন স্বল্পমূল্যে ধর্মবাণী বিতরণ করেন , পারলে তাদের কাছে বসুন । কেন ২০ হাজারী বক্তার জন্য এত হাহাকার করবেন  ? ওই টাকাটা দিয়ে মসজিদে ইসলামী ধর্মের শাস্ত্রের বই কিনে একটা লাইব্রেরি করুন , দেখবেন জ্ঞানচক্ষু খুলে যাবে । তখন এমনিতেই অর্থলোভী ধর্মের ঠিকেদারগণ  ব্যবসা গুঁটিয়ে অন্য কাজে মন দেবে । । 



আরিফুল ইসলাম সাহাজি


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের প্রধান কুশীলব ধীবরের চরিত্র বিশ্লষণ করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।

পথের দাবি গল্পে গিরিশ মহাপাত্রের পোশাক পরিচ্ছেদ ও অদ্ভুত দর্শন বিষয়ক আলোচনা ।

দাম গল্পটি ছাত্র শিক্ষক পবিত্র সম্পর্কের উপর গভীর ছায়াপাত করেছে । মাস্টারমশায় শাসন করতেন , ভালবাসতেন না । এটা ঠিক নয় ' , আলোচনা করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।