নেতাজী এবং নজরুল দুই মনীষীর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন শিবরাম । অভিজ্ঞতাও ছিল দুই রকমের । ।
আরিফুল ইসলাম সাহাজি
Netaji and Nojrul |
কলকাতায় এসে শিবরাম অসহযোগিদের স্বেচ্ছাসেবক রুপে যোগ দেন । দেশবন্ধুর পছন্দ হলো কিশোর শিবরামকে , প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন অল্প সময়েই । দেশবন্ধু শিবরামকে ভর্তি করে দিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র পরিচালিত গৌড়ীয় সর্ববিদ্যায়তনে । সেখান থেকেই মেধাবী শিবরাম কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাশ করলেন । কলকাতাতে তেমন পরিচিত কেউ নেই , বাঁচার জন্য প্রয়োজন একটি কাজ । দৈনিক পত্রিকা ফেরি করতে থাকেন শিবরাম । বিষয়টি মহাত্মা দেশবন্ধুর নজর এড়ালো না । ফরবেস ম্যানসনে বিনে পয়সায় শিবরামের থাকা খাওয়া ও একটা অল্প মাহিনার চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেন তিনি। শিবরাম যোগ দিলেন আত্মশক্তি পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সদস্যরুপে । পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন সেসময়কার বিখ্যাত বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় , যিনি দীর্ঘদিন আন্দামানে নির্বাসিত ছিলেন । আর ম্যনেজার ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ।
নেতাজী ছিলেন ভয়ঙ্কররকম শৃঙ্খলপরায়ন । কোনরুপ বিশৃংখলা তিনি পছন্দ করতেন না । শিবরাম ঠিক তার উল্টো । শিবরাম আবার বাঁধাধরা নিয়ম শৃঙ্খলাকে তুচ্ছজ্ঞান করতেন । এককথায় শিবরাম বেপরোয়া । স্বাভাবিকভাবে সুভাষচন্দ্র রুষ্ট হন শিবরামের কার্যকলাপে । সুভাষচন্দ্র একদিন ডাকলেন শিবরামকে , বললেন হিসাব নিকেশ বুঝে নাও , কাল থেকে তোমার আসবার দরকার নেই । আবার কর্মহারা হলেন , অনেক ভেবে ঠিক করলেন , নিজেই একটা কাগজ করবেন । শুরুও করলেন , তবে এবারও বিধি বাম । সমস্যা দেখা দিলো নামকরণ নিয়ে । শিবরাম তাঁর কাগজের নাম দিলেন , যুগান্তর । একই নামে বিপ্লবীদের আগে একটি প্রসিদ্ধ কাগজ ছিল । শিবরামের তেজস্বি লেখনী দেখে ইংরেজ সরকার ভাবলো , বিপ্লবীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন । কারারুদ্ধ হলেন শিবরাম । প্রথমে তাঁকে প্রেসিডেন্সি জেলে কারারুদ্ধ করা হয় । অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাকে বহরমপুর জেলে বদলি করার আদেশ আসে । কিছুটা ভয় পেলেন শিবরাম । বহরমপুর জেলের ভারি দুর্নাম । আস্ত একটা পাগলা গরাদ বলে শুনেছিলেন তিনি । পরে জানতে পারেন , সে জেলে বন্দি আছেন বিদ্রোহী কবি নজরুল । শিবরামের সব ভয় উবে গেল নিমেষে । বহরমপুর জেল শিবরামকে আপন করে নিলো । নজরুলের স্বভাবভঙ্গিমায় কয়েদখানা হয়ে উঠল আস্ত এক সাহিত্যের মজলিশ । নাচ গান তো আছেই আর ছিল নজরুলের হাতের রান্না । যা ভীষণই পছন্দ ছিল শিবরামের । পরবর্তীতে তিনি লিখেছিলেন ,
' ' মনে পড়লে এখনও জিভে জল সরে । নিজেকে সজীব বোধ করি ! আর জেলখানার সেই খানা । আহা ! আমি তো বহরমপুর জেলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত টিঙটিঙে রোগা ছিলাম । তারপর দুইবেলা কাজীর খানা খেয়ে এমন মোগলাই চেহারা নিয়ে বের হলাম যে আর রোগা হলাম না । ' '
কবির সঙ্গ থাকতে থাকতে সাহিত্যের প্রতি আকর্ষন অনুভব করেন শিবরাম । জেলে থাকাকালীন বেশ কিছু কবিতা লেখেন । চুম্বন বলে একটি কবিতা লিখে পাঠিয়েছিলেন ঋষি অরবিন্দ ঘোষের ভাই প্রখ্যাত বিপ্লবী বারীন্দ্রনাথ ঘোষের বিজলী পত্রিকায় । বিজলী ছাপেনি লেখাটি , সে বিষয়ে কথা বলতে দফতরে গেলে তাঁকে একটু অপমানিত হতে হয় । পরে কবিতাটি ছাপা হয় বিখ্যাত ' ভারতবর্ষ' পত্রিকায় । কবিতাটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলা সাহিত্য অন্যান্য বিখ্যাত লেখকদের মতই শনিবারের চিঠির সম্পাদক সজনীকান্ত দাশ বেনজিরভাবে শিবরামকে আক্রমণ করেন , রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন শিবরাম চক্রবর্তী । তারপর শুধু লিখতেই থাকলেন তিনি । রেখে গেলেন অমর সব কৃতিত্ব ।
আরিফুল ইসলাম সাহাজি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন