ভাত গল্পটি মূলত ভাত পাওয়ার জন্য একটি মানুষের লড়াইকে ব্যঞ্জিত করেছেন লেখিকা । আলোচনা করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।
ভাত - মহাশ্বেতা দেবী |
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে একজন শক্তিমান সাহিত্য সাধক হলেন মহাশ্বেতা দেবী - যাঁর লেখনীর প্রেক্ষিত হিসাবে উঠে এসেছে অন্ত্যজ প্রান্তিক সমাজের মানুষের কণ্ঠস্বর । আলোচ্য ভাত গল্পটি তার ব্যতিক্রম নয় । যেখানে ক্ষুধার অন্ন ভাত সংগ্রহের জন্য একটি মানুষের অসম লড়াইয়ের গল্প প্রতিধ্বনিত হয় ।
গল্পের একেবারেই উন্মেষ লগ্নে একটি বাক্য গঠনে আমাদের চোখ আটকা পড়ে ।
' কী রকম যেন উগ্র চাহনি '
সঙ্গে সেই মানুষটির শরীরী আদল এবং পোশাক পরিচ্ছেদের বর্ণনা থেকে খুব সহজে আমরা মানুষটির সমাজ বীক্ষণ সম্পর্কে অবগত হতে পারি । মানুষটির নাম উৎসব । মাতলা নদীর জল কেড়ে নিয়েছে তার প্রিয়জন (স্ত্রী - সন্তান ) । এই যন্ত্রণা এবং ভাত না পাওয়ার আক্ষেপ তার জীবনটাকে করে তুলেছে শূন্যতায় পরিপূর্ণ । তাই সমান্য কয়েক মুঠো ভাতের জন্য সে বাসিনির মনিব বাড়িতে আড়াই মন কাঠ কাটতে কষ্ট অনুভব করে না ।
ভাত তার জীবনে এক বিরাট শূন্যতার সঞ্চার করেছে । গল্পের একেবারেই অন্তিম লগ্নপ্রায় এসে ভাতের মাহাত্ম্যর কথা বলতে গিয়ে আমরা উৎসবকে বলতে শুনেছি -
' চুন্ননীর মা কখনো তাকে এমন সুখ দিতে পারেনি '
অর্থাৎ উৎসবের জীবনে ভাতই শেষ , ভাতই প্রথম । এই ভাত খাওয়ার জন্যই তার যত লড়াই -
' ' ভাত তো খায়নি উৎসব অনেক দিন । ভাত খেয়ে দেয়ে শক্তি পেলে উচ্ছব সেই বাদাটা খুঁজে বার করবে । ' '
ভাত খেয়ে উৎসব সেই বাদাটা খোঁজে যে বাদায় লুকিয়ে আছে বাসিনির মনিবদের সম্পদের রহস্য ।
শিব মন্দিরে এক ঘুম ঘুমাবার পর ভাত খেতে আসে উৎসব । কিন্তু একি ? মৃত্যু ঘটেছে সেই বুড়ো কর্তার । ফলে অপবিত্র ক্ষুধার অন্ন ভাত তাকে খেতে দিতে চায় না বড়ো লোকেরা । তবে উৎসবের যে ভাত খাওয়ার খুবই দরকার - মনে মনে অভিসন্ধি আঁটে সে , পালিয়ে যায় ভাতের ডেকচি নিয়ে -
' তার চোখ এখন বাদায় কামটের মতো হিংস্র । '
এভাবেই পুরো গল্পটি গভীর অভিনিবেশে অধ্যয়ন করলে দেখা যায় উৎসবের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ভাতের আমৃত সুঘ্রাণ । যা পাঠক হৃদয়কেও বিগলিত করে ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন