শিক্ষকই পারেন সমস্ত অন্ধকার দূর করতে । এই বিষয়ে লিখেছেন প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
শিক্ষকতা পৃথিবীর সবচেয়ে মহৎতম পেশা । সকল পেশার উৎস । দেশ ও জাতির মেরুদন্ড সোজা রাখার কাজটিই করেন একজন শিক্ষক । দৃষ্টান্ত সহযোগে বিষয়টি উপস্থাপন করা দরকার , সেবার মহান দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেন একজন মহান চিকিৎসক । ঈশ্বরের দ্বিতীয় রুপ তাঁদের অনেকেই (সকলেই নয় , জল্লাদ রুপেও অনেককেই পাবেন )।এখন ঠিক এই মুহুর্ত , আপনাদের কাছে যদি একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিই , বলুন তো একজন চিকিৎসক সমাজিক জীবনে , গণ মানুষের জীবনে , তাঁদের চলার পথের প্রতিদিনকার যে গল্প , সেই গল্পগুলোকে মুখরিত করে তুলতে কে বেশি অবদান রাখেন ! শিক্ষক না চিকিৎসক ? প্রায় সকলেই সমস্বরেই অবশ্যই বলবেন , একজন চিকিৎসক হাজার হাজার মানুষকে যমের সাথে প্রতিদ্বন্দীতা করে বাঁচিয়ে আনলেও , একজন শিক্ষকের মহান ঋষিপ্রতীম ব্যক্তিত্বের সামনে তিনি দাঁড়াতেই পারবেন না । আসুন বিষয়টিকে আরও একটু ঋজুভাবে পরিবেশন করি , ধরুন , একজন চিকিৎসক সারা জীবনে ৩০,০০০ হাজার মানুষকে একেবারেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন , অন্যদিকে একজন শিক্ষক তাঁর পুরো কর্মময় জীবনে ওমনই পাঁচজন চিকিৎসককে গড়ে দিয়েছেন । এবার বলুন পাঠক , একজন শিক্ষক কতজন মানুষকে জীবন দান করলেন । আপনারা গণিতে খুব কাঁচা না হলে বলবেন , ১,৫০০০০ গণ মানুষের জীবন রক্ষায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হলেন তিনি । শিক্ষকের অবস্থান সকলেরই উর্দ্ধে , এই বিষয়টির প্রতিষ্ঠা দিতে কেউই দ্বিধান্বিত হবেন না । কেননা সকলেই কোন না কোন শিক্ষকের ছাত্র , যাঁর জীবন দর্শনটাই পাল্টে গেছে শিক্ষকের অমৃত কথামৃতের জাদু স্পর্শে ।
একটা খারাপ সময় পার করছি আমরা , এই বিষয়টি স্বীকার করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় । বিশেষ করে যুবসমাজের একটা বড় অংশ ক্রমে অধঃপতিত অন্ধগলির বাসিন্দা করে তুলছে নিজেদেরকে । বিষয়টিকে ভাবনার স্তরে সেঁকে নিলে নেপথ্যে অনেকগুলো কারণই সেঁকনিতে ধরা পড়বে । তবে , প্রধানতম কারণ বোধহয় কর্মহীনতা । যোগ্য মানুষ , তাঁর হকের কাজটি না পেলে , সেটা ভয়ঙ্কর যন্তনার । উপযুক্ত শিক্ষা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বেকার ঘুরে বেড়ানোর অবসাদ , তাঁদের মননে , হৃদয়ে রক্তক্ষরনের সৃষ্টি করে । ফলে , একটা ঘৃণামিশ্রিত ক্রোধ তার রক্তের শোণিত প্রবাহে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে । সেই কর্মহীনতার যন্ত্রণায় , তাদেরকে বিপদগামী করে তোলে । এই বিষয়টি ফেলে দেওয়ার মত নয় মোটেও ।
এই সার্বিক অপসময়ে একমাত্র কান্ডারীর ভূমিকা নিতে পারেন শিক্ষকসমাজ । শিক্ষার্থী কাদার পুতুল সদৃশ । একজন সুশিক্ষক ইচ্ছেমত গড়ে নিতে পারেন । পুঁথিগত বিদ্যায় জ্ঞানী হলেও ভালোমানুষ হওয়া সম্ভব নয় । ভালো মানুষ হতে গেলে একটা অনুভেদ্যজাত মননের অধিকারী হতে হয় । এই মনন সহজাত নয় , বরং তা অর্জিত । সমাজ , সংসার , পরিবেশের সৎগুণে তৈরি হয় এই অনুভবিত হৃদউচ্ছ্বাস । শিক্ষক শিক্ষার্থীর হৃদয়ের এই মহৎ দুয়ার খুলতে প্রধান কুশীলবের ভূমিকা নেন । ক্লাসে গিয়ে শুধুমাত্র সিলেবাস শেষ করবার তাড়া থাকলে তিনি অবশ্যই সুশিক্ষক নন , শিক্ষকরুপী জঞ্জালসদৃশ । সুশিক্ষক তিনিই যিনি শুধুমাত্র পাঠক্রমিক শিক্ষার পাঠই দেন না , তিনি মানবতার শিক্ষা দেন । মানুষ হওয়ার ঘানিতে ঘোরান তাঁর ছাত্রদের ।
একটু একটু করে সকলের প্রচেষ্টা ছাড়া দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত হতে পারে না । পরিবার প্রধানতম ভূমিকা রাখে ভালো মানুষ গঠনে । জিনেটিক ব্যাপারও থাকে । বাবা মা অবশ্যই সবচেয়ে বড়ো শিক্ষক । তবে গুরুর ভূমিকা কোন অংশ কম নয় । আমরা যতটুকু সময় বাচ্চাদের কাছে পায় , ওইটুকু সময় কি যথেষ্ট নয় , একটি বাচ্চার আদলকে পরিপূর্ণ ভালোত্বে রূপান্তর দেওয়ার জন্য । অবশ্যই যথেষ্ট । পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন , তাহলে কেন এই সমাজিক অধঃপতনের পরিআবহ ? কেন ক্রমে আমরা অন্ধগলির অংশ হয়ে উঠছি । এই প্রশ্নের উত্তর হলো , সত্যকার সুশিক্ষক যাঁদেরকে আমরা বলবো , সেই মহত্ত্বের পর্বে এখনকার সকল শিক্ষক নিজেদেরকে নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছেন না । নেপথ্যে কারণটিও বোধহয় আমাদের সকলেরই জানা । একটি বাংলা প্রচলিত প্রবাদ বলি শুনুন , পরের ছেলে নিত্যানন্দ , যত যাবে গোল্লায় , ততই আনন্দ । এই আপ্তবাক্যে নিজেদেরকে মানিয়ে নিচ্ছেন এখনকার শিক্ষকদের একটা অংশ । ফলে তাঁদের অবহেলায় শিক্ষার্থীদের যথার্থই মানবিক মানগত মানস গঠন গড়ে উঠছে না । তাঁদের তাড়া আছে - দায় আছে , তবে সে তাড়া ছাত্রকে মানুষ করবার তাড়া নয় । সে দায় সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করবার দায় । যিনি ক্লাসে যান শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের পাঠক্রমিক ক্যারিকুলাম শেষ করার লক্ষ্যে , তাঁকে সুশিক্ষক বলা ঠিক হবে না । সুশিক্ষক তিনিই , যিনি শিক্ষার্থীকে মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেবেন । হৃদয়ের কলুষতাকে উৎস থেকে উৎপাটন করে , ন্যায়ের পক্ষে মিছিলে হাঁটতে শেখাবেন । অসম্প্রদায়িকতার পাঠ দেবেন । ধর্ম বর্ণ ব্যতিরেকেই মানুষকে মানুষ হিসাবে জ্ঞান করবার চেতনা দেবেন । তিনি ক্লাসে শুধুমাত্র পাঠক্রমিক জ্ঞান দেবেন না , বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে ছুটবেন । অবক্ষয়ের অধঃপতিত দিকটি শিক্ষার্থীদের সামনে উন্মোচিত করবেন , তাঁদেরকে ভালোমনের মানুষ হওয়ার উপর জোর দেবেন । ভুললে চলবে না , শিক্ষক কারিগর , শিক্ষার্থী কাদার তৈরি পুতুল । শিক্ষক যেমন আদল দেবেন , তেমনই রুপ নেবে শিক্ষার্থীরা । ভালো মানুষের বড্ড প্রয়োজন স্যার , আপনারা যাঁরা শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত আছেন , তাঁরা অন্ততঃ কয়েকজন ছাত্রকে ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলুন ।
লেখক
আরিফুল ইসলাম সাহাজি
৭৯০৮১১৮৬০০
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন