নেতাজী অন্তর্ধান রহস্য : আসলে কি হয়েছিল প্রিয় নেতাজীর সঙ্গে ! দেশের মানুষের ধোঁয়াশা আজও কাটেনি। এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
নেতাজী সুভাষচন্দ্রের কাছে সবার আগে দেশ , সবার পরেও দেশ । চাইলেই কাটাতে পারতেন নির্বিঘ্ন জীবন , সিভিল সার্ভিসে ভালো নম্বর পেয়ে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন । তবে ইতিহাস বোধহয় তা চাইতো না , যিনি কোটি কোটি ভারতীয় হৃদয়ের আরাধ্য হবেন , তিনি কোন দুঃখে গোরাদের দাস হতে যাবেন ? হতভাগা দেশবাসীর জন্য পরিবার পরিজন এবং জীবনের থেকেও প্রিয় জন্মভূমিকে ছেড়ে গেছেন । প্রেম কর্তব্যের থেকে দামি যেন না হয়ে ওঠে , সে জন্য প্রিয়তমা স্ত্রী এমিলি শেঙ্কলের সঙ্গে নিজের বিবাহকে গোপন রেখেছিলেন । ৫ মার্চ , ১৯৩৬ সালের একটি চিঠিতে প্রিয়তমা স্ত্রীকে সুভাষচন্দ্র লিখেছিলেন , ' ' মাই ডার্লিং , কখনও সখনও হিমবাহও গলে যায় । আমার মনে এখন অনেকটা সেইরকমই অবস্থা । আমি যে তোমায় কত্তটা ভালোবাসি সেটা জানাতে এই চিঠিটা লেখা থেকে নিজেকে সম্বরণ করতে পারলাম না । ' মাই ডার্লিং ' , আমাদের নিজেদের মত করে কী বলতে পারি , যে তুমি আমার হৃদয়ের রাণী ? ' '
সুভাষচন্দ্র ওই চিঠিতে আরও লিখেছেন , ' ' জানি না ভবিষ্যতে কী হবে । হতে পারে , পুরো জীবনটাই হয়তো জেলে কাটাতে হবে অথবা আমাকে গুলি করে দেওয়া হতে পারে । এও সম্ভব যে তুমি হয়তো আমাকে কখনও আর দেখতেই পাবে না , অথবা আমি হয়তো কখনও তোমাকে চিঠিও লিখতে পারবো না । কিন্তু ভরসা রেখ , তুমি চিরকাল আমার হৃদয়ে থাকবে , আমার মনে , আমার স্বপ্নে । যদি এই জীবনে সম্ভব না হয় , তাহলে পরের জীবনে তোমার সঙ্গেই থাকবো । ' '
ভাবুন , প্রিয়তমা পত্নীকে কত্তটা ভালবাসতেন সুভাষচন্দ্র । সেই প্রিয়তমা স্ত্রী এবং কন্যা অনিতা বসুকে অনিশ্চয়তায় ভরা পৃথিবীতে ছেড়ে বীর সেনাপতি সুভাষচন্দ্র দেশমায়ের শৃঙ্খল মোচনে রণভূমে এসে দাঁড়ান । ওই যে বললাম , তাঁর কাছে দেশই প্রথম , দেশই শেষ ।
প্রিয় সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে লিখতে - পড়তে গিয়ে আমাদের সকলেরই হৃদয় আন্দোলিত , বিগলিত হয় , এর পিছনে কিছুটা খেদ এবং অতৃপ্তির আস্বাদ রয়েছে আজও ভারতবাসীর জিজ্ঞাসায় । নেতাজী সুভাষচন্দ্র উজাড় করে দিয়েছেন এই দেশকে যৌবন শৈশবের সবটুকু সকাল বিকেল । অথচ দেশ কী দিল ওই মহৎ প্রাণকে ? তাঁর জীবনের অন্তিম পরিনতি কী হয়েছিল , সেই বিষয়টি পর্যন্ত উন্মোচিত হয়নি ।এক সময় তো সুহৃদ ছিলেন নেহেরু ও সুভাষ , প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পন্ডিত নেহেরুর সুভাষচন্দ্র বিষয়ে হিমশীতল আচরণ আজও রহস্যময় । জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতায় তিনি সুভাষচন্দ্রের ধারে কাছেও ছিলেন না , এতএব সুভাষ বোস ফিরলে তাঁর মসনদ টলোমলো হতে পারে , এমন অবসাদ তাঁকে পেয়ে বসেনি তো ?
সর্বজন বিধিত সুভাষচন্দ্রের মৃত্যু নিয়ে যে রটনাটি রয়েছে সেটি হলো , ১৯৪৫ সালে তাইহোকুতে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর । ঘটনাটি আজও বিশ্বাস অবিশ্বাসের নাগরদোলায় ঘূর্ণায়মান । এই নিয়ে গঠিত হয়েছে একাধিক কমিশন । পঞ্চাশের দশকে শাহনওয়াজ কমিশন তাঁদের রিপোর্টে জানিয়েছিল , তাইহোকুতেই সুভাষচন্দ্রের জীবনের মহাপ্রয়ান ঘটেছে । পরে ষাটের দশকে গঠিত হয় , খোসলা কমিশন । যদি সুভাষচন্দ্রের মৃত্যুই হয় , তাহলে দ্বিতীয় কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা কী ছিল ? নাকি তিনি বেঁচে আছেন , ফিরলে মুশকিল এমন আশঙ্কা করছিলেন সুভাষচন্দ্রের বন্ধুরা ! খোসলা কমিশনও একই কথার জাগর কাটবার পর গঠিত হয় মুখার্জী কমিশন । পরাধীন ভারতবর্ষে প্রিয় সুভাষ গোরাদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিলেন , স্বাধীনতা উত্তরসময়ে তিনি একদা সহযোদ্ধা নেহেরুর বিশেষ চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিলেন কী ? মুক্তচিন্তার মানুষের মনে এমন প্রশ্ন জাগ্রত হতেই পারে , সেটা মোটেও অবান্তর নয় ।
মুখার্জী কমিশনের সদস্যরা বিভিন্ন দেশঘুরে এক বিস্ফোরক তথ্য পেশ করে । তাঁদের যে রিপোর্ট মিস্টার মুখার্জী দাখিল করেছিলেন , সেখানে তিনি খোদিত করে দিয়েছিলেন , ১৯৪৫ সালের ১৮ই আগষ্ট তাইহোকুতে কোন বিমান দুর্ঘটনায় ঘটেনি । যদিও কোন কারণ না দেখিয়েই সেই রিপোর্টটিকে বাতিলের খাতায় জমা করে দেওয়া হয়েছিল । ২০১৬ সালের শুরুতেই ব্রিটেনের ' বোসফাইলস ডট ইনফো ' নামের একটি ওয়েবসাইট জাপান সরকারের করা একটি তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে , যেটি করা হয়েছিল ১৯৫৬ সালের জানুয়ারি মাসে । যেখানে সেই একই বিষয়ের চর্বিত চর্বন করা হয়েছিল - বিমান বন্দরেই মৃত্যু হয়েছে সুভাষচন্দ্রের ।
২০১৭ সালের ইংরেজি বছরের শুরুতেই অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জি ডি বক্সি সুভাষচন্দ্রের মৃত্যু রহস্য নিয়ে একটি বই লেখেন , বইটির নাম ' বোস : দ্য ইন্ডিয়ান সাম্যুরাই - নেতাজী অ্যান্ড দ্য আইএনএ মিলিটারি অ্যাসেসমেন্ট ' , এই বইটিতে মেজর জিডি বক্সি দাবি করেছেন , বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি নেতাজীর । ওই দুর্ঘটনার রটনা ঘটানো হয়েছিল , যাতে তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে যেতে পারেন । মূলত জাপানের গোয়েন্দা দফতর থেকেই এই দুর্ঘটনার বিষয়টি ছড়ানো হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন মেজর বক্সি । সেই সুযোগে নেতাজী পালিয়ে যান সোভিয়েত ইউনিয়নে । টোকিওর সেই সময়ের সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত জেকব মালিকের সাহায্যে সাইবেরিয়ায় সুভাষচন্দ্র আজাদ হিন্দ বাহিনীর শাখা নির্মাণ করতে সমর্থ হন বলেও উল্লেখ করেছেন মেজর বক্সি । এরপরই সুভাষচন্দ্রকে ধরতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালান ইংরেজ গোরারা । নেতাজীকে ইন্টারোগেট করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলে ইংরেজ প্রশাসন । এই জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে সুভাষচন্দ্রের উপর নির্মম শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় । সেই নির্যাতনের ফলেই মৃত্যু হয় নেতাজী সুভাষচন্দ্রের , বলে বিস্ফোরক দাবি করেছেন মেজর বক্সি ।
বিষয়টি সত্য হলে , তা ভয়ঙ্কর লজ্জার এবং অপমানের । যে বীর সেনাপতির যুদ্ধশেষে রাজ্যভিষেক হওয়ার কথা , তাঁর এমন যুদ্ধবন্দি রুপে অপমানের মৃত্যু , কোটি কোটি নেতাজী ভক্তকে কষ্ট দেবো , সে বিষয়ে দ্বিমত নেই । একদা বন্ধু ও সংগ্রামী সাথীরা নেতাজীকে রক্ষা করতে তিনি তৎপর হলেন না কেন ? সুভাষচন্দ্র ফিরলে তাঁর জনপ্রিয়তায় রাজ্যপাট হারাবেন , এই ভয়ই কি পাচ্ছিলেন তাঁরা ! সত্য সামনে আসুক ।
লেখক
আরিফুল ইসলাম সাহাজি
7908118600
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
স্যার আমরা মহানায়ক নেতাজির শেষ পরিণতি জানতে চাই
উত্তরমুছুনপরে আরও লেখা নিয়ে আসবো নেতাজী বিষয়ে ।
মুছুন