বীর সেনানীদের রক্তাক্ত শরীর জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়ে দাও , ওঁরা শান্তি পাবে । এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।




রাষ্ট্র  ধরিত্রীর একটি সীমাবদ্ধ স্বতন্ত্র অংশ । অর্থাৎ মূল পৃথিবী পুরুষের ঔরসজাত পরিআবহিক নিদিষ্ট ভূখন্ড , মানবকুল , সংস্কৃতি নিয়ে স্থাপিত হয় রাষ্ট্রভিত্তি  । যেহেতু ভূধরে রয়েছে একাধিক রাষ্ট্রের উপস্থিতি  , উক্তহেতুগত দিক থেকে একটি রাষ্ট্র  অন্যান্য একাধিক রাষ্ট্র দ্বারা  পরিবেষ্টিত থাকে । পাশাপাশি অবস্থানরত এই রাষ্ট্রগুলি  হল প্রতিবেশী রাষ্ট্র  । দৃষ্টান্ত সহযোগে বলতে গেলে আমাদের স্বদেশ ভারতবর্ষ পূব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ দিক থেকে বাংলাদেশ পাকিস্তান নেপাল ভুটান চীন আফগানিস্তান মালদ্বীপ সহ একাধিক রাষ্ট্রসহযোগে  বেষ্টিত । একজন গৃহস্থপুরুষ যেমন প্রতিবেশী দ্বারা বেষ্টিত হয়ে সমাজিক জীবন পালন করে , রাষ্ট্রের  আচরণও সদৃশ । প্রতিবেশী বেষ্টিত যে সমাজিককরণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রকে চলতে হয় , সেই গতিপথে রাষ্ট্র যেমন বন্ধু রাষ্ট্রের  আন্তরিকতায় আপ্লুত হয় , তেমনি শত্রু রাষ্ট্র দ্বারা  ক্ষতবিক্ষতও  হয় রাষ্ট্রের সুসন্তানগণ  । 


প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অনেক রাষ্ট্রের সঙ্গে পরস্পর বৈরিতা লক্ষ্যগোচর হয় ।আধুনিক সব রাষ্ট্রেই রয়েছে  উন্নত সব মারণ অস্ত্রের সম্ভার ।  সারা বছর একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব লেগে থাকে বেশ কিছু রাষ্ট্রের মধ্যে । পাঠক অবগত আছেন , রাষ্ট্রকে রক্ষা করবার জন্য প্রত্যক রাষ্ট্রের রয়েছে নিজস্ব সেনাবাহিনী । সেনাবাহিনীর সদস্যরা আবার বেশ কয়েকটি বিভাগে বিভক্ত থাকেন , বিভাগ সমূহ এইরকম সাধারণত হয়ে থাকে ,  স্থলবাহিনী নৌবাহিনী বিমান বাহিনী । এই তিন বাহিনীর আবার একাধিক বিভাগ থাকে । 

আমাদের দেশের যে কয়টি সীমান্ত অংশ আছে , তার ভিতর উত্তপ্ত ও রক্তাক্ত অবস্থা বিরাজমান হয়ে থাকে চীন ও পাকিস্তানি সীমান্ত অংশ । প্রতিদিন সীমান্তে গুলিবর্ষণে আমাদের দেশের বীর সেনাগণ নিজ জীবন উৎসর্গ করেন । বিষয়টি এতটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে যে , বিষয়টি আমাদের আর মোটেও আলোড়িত করতে পারে না । টেলিভিশনের পর্দায় কিম্বা সংবাদপত্রের পাতায় ছোট করে  খবরটি পরিবেশিত হলেও তা সাধারণ গণ পাবলিকের চিন্তার আকর হয়ে উঠতে পারছে না । সেনা সদস্যরাও যে সাধারণ গণ মানুষের অংশ , এই বোধটাই হারিয়ে যাচ্ছে বইকী ! 

দেশ গঠনে একজন সেনা সদস্য মহৎ ভূমিকা রাখেন । দেশের শান্তি অখণ্ডতা রক্ষা করতে যমদুয়ারে দাঁড়িয়ে পড়েন দেওয়াল হয়ে । এ দেওয়াল ভেদ করে শত্রুকে প্রবেশ করতে হবে পবিত্র স্বদেশভূমিতে । সারা দেশ যখন ঘুমের দেশে তখনও রাষ্ট্রের এই সকল বীর সন্তানগণ সীমান্তে অবস্থান করেন শত্রুর পথ রুদ্ধ করতে । শীত বর্ষা গ্রীষ্ম , কোন কাল উৎসবে বিরাম নেই এই টহলদারি । জীবনকে তাঁরা মৃত্যুর মুখে দাঁড় করিয়ে রাখে সারাটা দিন , সারাটা রাত । পুরো দেশবাসীর রক্ষক তাঁরা , শত্রুর বুলেট যেমন বক্ষে ধারণ করতে কাঁপে না তাঁদের বুক , তেমনি বুলেটে বুলেটে শত্রুর বুক ঝাঁঝরা করতেও পিছপা হননা তাঁরা । 

দেশ রক্ষা , দেশের অখণ্ডতাই তাঁরা নিঃস্বার্থভাবেই অবদান রাখছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম । দেশপ্রেম ব্যতীত এ কর্মে নিযুক্ত হওয়া সম্ভব নয় । দেশময় যত রকমের কর্মগত প্রবাহ রয়েছে , তার ভিতর সব চেয়ে বিপদজনক সংকটের মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে যায় সেনাপরিবারের এক একজন সদস্য । সকলেই জানেন সেনাজীবনের ভয়ঙ্কর উৎকণ্ঠার কথা , তারপরও তাঁরা শুধুমাত্র দেশ সেবায় অবদান রাখবার জন্য যোগ দেন সেনাবাহিনীতে । কঠোর অধ্যবসায় ও কৃচ্ছ্রসাধনার মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন দেশ নায়ক । শত্রু , সীমান্ত হয়ে দেশের ভিতরে প্রবেশ করে অরাজক পরিস্থতি যাতে তৈরি করতে না পারে , তার জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মত তাঁরা জেগে থাকেন সীমান্তে । 

ভুললে চলে না , একজন সেনা সদস্য , তিনি শুধুমাত্র দেশ নায়ক নন , তিনি কোন বাবা মায়ের সন্তান , কোন সন্তানের পিতা কিম্বা কারও স্বামী মানুষ । বছরের বেশিরভাগ টুকুই তাঁদের কাটে শত্রুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে । স্ত্রী সন্তান ,  বাবা মায়ের সাথে দেখা সক্ষাৎ চলে উৎসবে উৎসবে । ক্লান্তিহীন তাঁরা , অক্লান্ত তাঁদের গতি । যাত্রাপথ সংকটপূর্ণ , পাথর ভেঙে , বরফ সরিয়ে তাঁরা এসে দাঁড়ান শত্রু শিবিরে । আরও কত্ত রকমের অনিরাপদ কর্মপ্রবাহ থাকতে তাঁরা কেন এই অতি সংকটপূর্ণ জীবিকা বেছে নিলেন জীবনের জন্য ? শুধুমাত্র অর্থ উৎপাদনের উৎস হিসাবে কী ? না এক্কেবারেই নয় , দেশপ্রেম তাঁদেরকে এই পথে টেনে এনেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে । আধুনিক সময়ের স্বাধীনতা সংগ্রামী এরা । পরাধীন ভারতবর্ষে যেমন গণ মানুষগুলো ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলেন একশত নব্বই বছর , ঘুমাননি শুধু অগ্নিযুগের বিপ্লবীগণ । ছিনিয়ে নিয়েছিলেন সাধের স্বাধীনতা ।  আজ শত্রুরাষ্ট্রও  দেশের স্বাধীনতায় সদা হস্তক্ষেপ করতে চাইছে , তবে তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে আমাদের বীর বিপ্লবী সেনাপরিবারের ত্যাগ তিতিক্ষা ও কৃচ্ছ্রসাধনার জন্য । আমাদের রক্ষা করতেই বুকে বুলেট ধারণ করেন তাঁরা ।আমাদের বীর জওয়ানদের রক্তাক্ত শরীরে পতাকাটা জড়িয়ে দাও , ওদের ওম হবে , ওরা স্বস্তি পাবে । 


লেখকের এই প্রবন্ধটি দৈনিক স্টেটসম্যান এ পূর্বে প্রকাশিত । 

লেখক 
আরিফুল ইসলাম সাহাজি 
আলাপন : ৭৯০৮১১৮৬০০

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের প্রধান কুশীলব ধীবরের চরিত্র বিশ্লষণ করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।

পথের দাবি গল্পে গিরিশ মহাপাত্রের পোশাক পরিচ্ছেদ ও অদ্ভুত দর্শন বিষয়ক আলোচনা ।

দাম গল্পটি ছাত্র শিক্ষক পবিত্র সম্পর্কের উপর গভীর ছায়াপাত করেছে । মাস্টারমশায় শাসন করতেন , ভালবাসতেন না । এটা ঠিক নয় ' , আলোচনা করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।