মজিদ কাকুকে আজও মনে পড়ে - আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।



আমি কেন স্বমেধা ব্যয় করে পুস্তক সমালোচনা করি , এমন প্রশ্ন অনেক প্রিয় গুণমুগ্ধ বন্ধু করেছেন । তাঁরা আমার অকৃত্তিম হিতকরী বান্ধব । কেননা , ওই সময়টিতে একটি মৌলিক লেখা , লেখা যায় । আসলে , আমি তাঁদের বইগুলোই সমালোচনা করি যাঁরা আমাকে সমৃদ্ধ করে , যাঁদেরকে দেখলে ভয়ঙ্কর রকম আপন মনে হয় , এমন ব্যক্তিত্বরাই আমাকে লিখিয়ে নেন ।

উপরের  বইটি মজিদ সাহেবের । আমার মজিদ কাকুর । অভিজাত সম্ভ্রান্ত মানুষ । প্রাসাদোপম বাড়িতে বসবাস করতেন । আর .জি .কর হাসপাতালের উচ্চপদস্থ কর্মচারি ছিলেন । আমার গুরু প্রখ্যাত কবি সাংবাদিক উপস্থাপক নীলাদ্রী ভৌমিক দা'র সূত্রে তাঁর সঙ্গে আলাপ । জানি না কেন , খুব তাড়াতাড়িই সকলের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে পৌঁছে যায় । তাঁর সঙ্গে আমার যখন আলাপ তখন তাঁর বয়স একাত্তর বছর । এক্কেবারেই তরুণ , ফিটফাট এবং হ্যান্ডসাম । ছোটগল্প , উপন্যাস মিলিয়ে ততদিনে ১৪টি বই বেরিয়ে গেছে । সুভাষ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন , ত্রিপুরা সরকার তাঁকে সংবর্ধিত করেছেন ।

আমার একটি বদ অভ্যাস আছে , আমার প্রিয়জনদের সঙ্গে সম্পর্ক গাম্ভীর্যপূর্ণ হলে ব্যতিব্যস্ত হয় । একটা গুণই বলবো , তিনি যত গম্ভীর এবং অভিজাতপূর্ণ হন না কেন , আমি তাঁকে নিজের মত পাগলাটে ক্ষ্যাপা করে তুলি । মজিদ কাকু তখন জীবনের প্রান্ত সীমানায় এসে দাঁড়িয়েছেন , আমি ২৪ এর তরুণ । বয়স তাঁকে কখনও কাবু করতে পারতো না । আমাকে দেখে তিনি প্রায় বলতেন , আরিফুল কী চেহারাটি করেছো বলতো ? খাওয়া দাওয়া করো একটু । দেগঙ্গা অঞ্চলের সাহিত্যিক কবি লেখকদের নিয়ে তিনি একটি গোষ্টি তৈরি করেন । একটা মাসিক সাহিত্য আড্ডা বসত । আমিও হাজির হতাম । ছাইপাশ লেখা পড়তাম । একেবারেই প্রান্তিক সাহিত্য চর্চার এই আসর থেকেই দেখছি মূল সাহিত্য স্রোতের বাইরেও কত্ত কত্ত সাহিত্য মানস বাংলাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ।

মজিদ কাকু প্রয়াত হয়েছেন বেশ কয়েকবছর হল । বাইরে থাকার কারণে তাঁর জানাজাতে যোগ দিতে পারেনি । তাঁর কথাগুলো খুব মনে পড়ে , তিনি বলতেন , আরিফুল নিজের লেখা সাহিত্যের রথী মহারথীদের দেখানোর দরকার নেই । নিজের উপর আস্থা রাখো , সফল হবেই । একদিন দেখবে , তোমার লেখা ছাপা হবে সর্বত্রই ।

মজিদ কাকু , আপনাকে মনে পড়ে । আজও তপস্যা করছি । প্রকাশিতও হয় কিছু লেখা ।
আপনার এই একটি বই'ই অনেক খুঁজে পেয়েছি । আগামীতে বইটি নিয়ে আলোচনা করে কিছুটা ঋন শোধ করতে চাই ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের প্রধান কুশীলব ধীবরের চরিত্র বিশ্লষণ করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।

পথের দাবি গল্পে গিরিশ মহাপাত্রের পোশাক পরিচ্ছেদ ও অদ্ভুত দর্শন বিষয়ক আলোচনা ।

দাম গল্পটি ছাত্র শিক্ষক পবিত্র সম্পর্কের উপর গভীর ছায়াপাত করেছে । মাস্টারমশায় শাসন করতেন , ভালবাসতেন না । এটা ঠিক নয় ' , আলোচনা করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।