রাজশেখর বসু ওরফে পরশুরাম । আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।


রাজশেখর বসু ওরফে পরশুরাম 
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার অনন্য কাজ সাফল্যের সাথে যে কয়েকজন বিজ্ঞান সাধক করেছেন তাঁদের মধ্যে জগদীশ চন্দ্র বসুর নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ্য , এছাড়াও অনন্যদের মধ্যে ছিলেন মেঘনদ সাহা , রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী , সত্যেন্দ্রনাথ বসু , সুর্য্যেন্দুবিকাশ করমহাপাত্র , এবং রাজশেখর বসু প্রমুখ । এই ক্ষুদ্র নিবন্ধে আমরা রাজশেখর বসু তথা পরশুরাম সম্পর্কে জানতে উদ্দোগী হবো ।

ছাত্রজীবনে রাজশেখর ছিলেন অসম্ভব মেধাবী । কোন জিনিস একবার পরলে সেটি চিরন্তনভাবেই তাঁর হৃদয়ে গ্রথিত হয়ে থাকতো । এই মহান বিজ্ঞান সাধক শুধুমাত্র বিজ্ঞান চর্চায় নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি , বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার পথ ও পন্থার রসায়ন সম্পর্কে বাঙালি পাঠকের রসবোধকে তিনি উজ্জ্বীবিত করে তুলতে সক্ষম হন । শুধুমাত্র বিজ্ঞান চর্চার গুরু গাম্ভীর্য যুক্ত লেখনীর কচকচানি নয় , রাজশেখর বসু তাঁর রসবোধের জন্যও বাঙালির পাঠকের কাছে চিরন্তন ও শাশ্বতভাবেই আদরনীয় হয়ে থাকবেন । এ পর্বে তিনি পরশুরাম নামে সমধিক খ্যাতি লাভ করেন । 

রাজশেখর বসুর জন্ম ১৬ মার্চ , সাল ১৮৮০ ।জন্মস্থান নদীয়া জেলার উলা বীর নগর । পিতার নাম চন্দ্রশেখর । অসম্ভব মেধাবী রাজশেখর রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে পাস করেন । বিজ্ঞান সাধক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের আহ্বানে বেঙ্গল কেমিক্যালে গবেষণা শুরু করেন । কর্মজীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই সংস্থায় তিনি কর্মরত ছিলেন । তাঁর এক অমর অক্ষয় কৃতিত্ব চলন্তিকা নামক বাংলা অভিধান গ্রন্থের সংকলন প্রণয়ন । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানান সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন সাল ১৯৩৫ । এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা উপস্থাপিত পরিভাষা সংসদের সভাপতি পদেও তিনি অলংকৃত হন । 

সাহিত্য চর্চার জন্য তিনি একাধিক সন্মান ও পুরষ্কার দ্বারা ভূষিত হয়েছেন । পেয়েছেন রবীন্দ্রপুরষ্কার , সাহিত্য একাডেমি সহ একাধিক সন্মাননা । ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পুরষ্কার পদ্মভূষণেও সন্মানিত হন এই মহান বিজ্ঞান সাধক বাঙালি লেখক সমীপেষু । 

তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির মধ্যে উল্লেখ্য সাহিত্য কৃতির মধ্যে রয়েছে , পরশুরাম ছদ্মনামে গড্ডালিকা ১৯২৪ , হনুমানের স্বপ্ন ১৯৩৭ , স্বনামে বাল্মীকি রামায়ণ ১৯৪৬ , ব্যাসদেবের মহাভারত এর বাংলা সারানুবাদ ১৯৪৯ , মেঘদূতের বঙ্গানুবাদ ১৯৪৩ , লঘুগুরু ১৯৩৯ , বিচিত্রা ১৯৫৫ , কুটিরশিল্প , ভারতের খনিজ প্রভৃতি । 

২৭ এপ্রিল , ১৯৬০ সালে এই মহান বিজ্ঞান সাধক বাঙালি লেখকের মহাপ্রয়াণ সম্পূর্ণ হয় । 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের প্রধান কুশীলব ধীবরের চরিত্র বিশ্লষণ করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।

পথের দাবি গল্পে গিরিশ মহাপাত্রের পোশাক পরিচ্ছেদ ও অদ্ভুত দর্শন বিষয়ক আলোচনা ।

দাম গল্পটি ছাত্র শিক্ষক পবিত্র সম্পর্কের উপর গভীর ছায়াপাত করেছে । মাস্টারমশায় শাসন করতেন , ভালবাসতেন না । এটা ঠিক নয় ' , আলোচনা করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।