নারীগণ এখন সর্বক্ষেত্রেই পুরুষের সমকক্ষ । লিখেছেন আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
পৃথিবী পুরুষ তাঁর কেন্দ্রিক শক্তির আধার সূর্য্যের চারিদিকে ঘুরছে বিরামহীন ভাবে । গণ মানবের জীবনও এই ঘূর্ণনের মত চলমান । পথ চলা একার পক্ষে বড্ড বিরক্তিকর । সেজন্যই গণ মানবগণ সমাজ গোষ্টি রাষ্ট্র প্রভৃতি সমাজিক ও রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা রাখতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন । এই প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র সমাজিক প্রতিষ্ঠান হল পরিবার । বিষয়টির উপস্থাপন ঋজুতার জন্য পরিবার বলতে একেবারেই নিউক্লিয় একটি পরিবারকেই ধরা যাক । ধরুন , সেই পরিবারে রয়েছেন একজন পুরুষ এবং একজন নারী ।
নারী পুরুষের স্বভাবগত আদল বর্ণনা করতে গেলে সেই প্রাচীনতম ধ্যান ধারণার মজ্জাগত আকর নিয়ে এখন ভাবলে ঐতিহাসিক ভুল করা হবে । পঠিত গ্রন্থবলি কিম্বা প্রাচীন মানুষ দাদু দিদা বা অন্য সম্পর্কের আরও অনেক মানুষের মুখেই আমরা শুনেছি , পুরুষ হলেন তেজদীপ্ত শক্তি ও মননের অধিকারী । সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রকও তাঁরা । শিক্ষা , চাকরি সর্বক্ষেত্রেই একমাত্র তাঁদেরই অবিরত দ্বার । নারীদের সমাজিক অবস্থান সেই পর্বগত সময়ে ঠিক উল্টো । একই মুদ্রার যেন দুই পিঠ । পুরুষগণ সেই কালগত সময়ে যেমন ব্যাপক ভাবে নন্দিত হচ্ছেন , তেমনি সেই সময়েই নারীগণের অবস্থান পুরুষের তুলনায় অনেকটাই অস্বাস্থ্যকর ছিল । একপ্রকার অন্তপুরবাসিনী হিসাবেই শুরু হতো তাঁদের জীবনের গল্প , অন্তঃপুরের আবদ্ধ কুটিরেই সমাপ্তি ঘটত সে জীবনের গল্পের । আধুনিক সময়ের চোখ নিয়ে ভাবলে বিষয়টিকে কষ্টদগ্ধই বলতে হয় । একপ্রকার অসাড় এবং অবহেলিত মানব অংশ হিসাবেই কোন রকম ভাবে নারীগণ স্বঅস্তিত্ব বজায় রাখছিল ।
সুখের বিষয় , কালের ঘূর্ণিপাকে এসে ভীড় জমিয়েছে নবজাগরণের গাড়ি । সমাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে মননগত এক ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্যগোচর হয়েছে । স্বাভাবিক ভাবেই নারী পুরুষের অবস্থানগত স্বরূপের ভীষণ রকম পরিবর্তন সাধন হয়েছে । নারীগণ এখন আর বন্দি খাঁচার পাখি নন , তাঁরা আজ মুক্ত আকাশে ডানা মেলে ছুটে চলা একদল বিহঙ্গ । প্রতি পদে তাঁরা পুরুষের সমকক্ষ হয়ে উঠেছে । ' লেডিস ফাস্ট ' শব্দটি দ্বারা এতদিন মহিলা মহলের অক্ষমতাকে ইঙ্গিত করা হলেও , নারী সমাজ স্বকর্মকুশলতাই উক্ত শব্দবন্ধটির যথার্থতা প্রমাণ করছেন । সত্যই ' লেডিস ফাস্ট ' । মাধ্যমিক , উচ্চ মাধ্যমিক প্রবেশিকা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সময় , লেডিস ফাস্ট শব্দবন্ধখানির গুরুত্ব অনুভূত হয় ।
মহিলা মহল আজ বহির্বিশ্বের সর্বশাখাতেই স্বপ্রতিভার স্বাক্ষরই শুধু রাখছে তাই নয় , তাঁরা পুরুষের সমকক্ষ হয়ে উঠতে ভীষণ রকম ভাবে সক্ষম হয়েছে , বিষয়টি বলতে দ্বিধা হওয়ার কথা নয় । দেশীয় দৃষ্টিগত কোন থেকে যদি বিচার করা যায় , তাহলে লক্ষ্য করবার মত পরিবর্তন ঘটে গেছে আমাদের সমাজে । শিক্ষার ক্ষেত্রেই যদি ধরা হয় , তবে এমন সময় ছিল যখন নারী শিক্ষার বহরগত প্রবাহকে একটু খাটো চোখে দেখা হতো । খুবই উচ্চবিত্ত এবং আধুনিক মননের অধিকারী পরিবার ব্যতীত , সাধারণ গণ নিম্ন ও মধ্য কোন বিত্তের মহিলাগণ শিক্ষার সুযোগ পেতেন না । আবার উচ্চবিত্ত হলেও শিক্ষা সুযোগ পেতেন এমনটি বললে ভুল বলা হবে । প্রসঙ্গক্রমে বেগম রোকেয়ার নাম মনে পড়ছে , শিক্ষাগ্রহনের নিমিত্তে তাঁর ত্যাগ তিতিক্ষা কৃচ্ছ্রসাধন আজও আদর্শ রূপেই বিবেচিত ।
বর্তমান শিক্ষার স্রোতে শিক্ষার বহরকে সবচেয়ে বেশি প্রশস্ত করছে নারী সমাজ । বিদ্যালয় , মহাবিদ্যালয় , বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীর অধ্যয়ন উপস্থিতির দিকে লক্ষ্য করলে বিষয়টি বোঝা যায় । বলতে অসুবিধা নেই , নারী শিক্ষার তুলনায় পুরুষ শিক্ষার গ্রোথ অপেক্ষাকৃত নিম্নগামী হয়ে দাঁড়িয়েছে । দেশীয় অর্থনীতির মন্দা , চাকরির যাচ্ছেতাই রকম উপস্থিতি পুরুষ শিক্ষার গতি শ্লথ হওয়ার নেপথ্যের কারণ ।
শুধু শিক্ষা নয় , চাকরি ও অন্যান্য জীবন জীবিকাতেও মহিলা মহলকে অবহেলা করবার মত দুঃসাহস দেখানোর তেমন জায়গা আর থাকছে না । ' অবলা নারী ' এই শব্দবন্ধটি শরীরে জাপটে ধরেই জীবন শুরু এবং শেষ হতো যে নারীদের , তাঁরা আজ সবলা নারী শক্তির প্রতিভূ হয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিজেদের হিসাব চাইতে এসেছে স্বমহিমায় । বিষয়টিতে ঈর্ষান্বিত হওয়ার কোন হেতু নেই , বরং বিষয়খানি ভীষণ গর্বের । দুই বাহু সম শক্তি সম্পূর্ণ হলে দুঃসাধ্য সাধন করা যেমন কঠিন নয় , তেমনই গণ মানবের দুই রুপ নারী পুরুষ সম যোগ্যতম হলে দেশ ও জাতি দৌড়াবে প্রগতির পথে , এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দিহান হওয়ার জায়গা নেই ।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন