বিদ্যাসাগরের জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা কাব্যগ্রন্থ সাগর বহ্নি । আরিফুল ইসলাম সাহাজি

ঈশ্বরচন্দ্রের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ 




সম্প্রতি বিশিষ্ট অধ্যাপক নজরুল গবেষক ড. শেখ কামালউদ্দিন সম্পাদিত একটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ হাতে এসেছে । কাব্যগ্রন্থটির ' সাগর বহ্নি ' । দুইশত জন কবি একক ভাবনার নানা আঙ্গিক পরিধিগত বিস্তৃতি সমন্বিত দুইশত কবিতার এক বৃহৎ কাব্যসংকলন এই '  সাগর বহ্নি ' । একক ভাবনা বলতে , কাব্যগ্রন্থের মূল আধার হলেন মনীষী বিদ্যাসাগর মহাশয় । অতি সম্প্রতি উদযাপিত হল বাঙালির শ্রেষ্ঠতম শিক্ষাগুরু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী । গ্রন্থখানির প্রকাশক বারাসাত নজরুল চর্চাকেন্দ্র । বাঙালির পরম আদরণীয় মহৎপ্রাণ বিদ্যাসাগরের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ এবং বাঙালির জীবনে তাঁর অনবদ্য কল্যাণময় অবদানকে আরও একটু স্মরণীয় করে রাখবার জন্য এই গ্রন্থখানির মোড়ক উন্মোচনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন চর্চাকেন্দ্রের বিশিষ্ট জনেরা । সম্পাদক ড . শেখ কামালউদ্দিন গ্রন্থটির প্রকাশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেছেন , 
' বিদ্যাসাগর নাকি করুণাসাগর ' কিভাবে তাঁকে চিহ্নিত করলে যথার্থ ভাবে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা সম্ভব - তাতে সম্পাদক অপ্রস্তুত । তাহলে তিনি কী ? তাহলে কেন তাঁকে এখনো মনে রাখবো কিংবা ভাবি কালো মনে রাখবে তা বোধ হয় আলাদা করে চিহ্নিত করা সম্ভব নয় ! যেভাবে তাঁকে বলা হল , যদি সবগুলো মিশিয়ে তাঁকে বোঝানো যায় তাহলেও বোধহয় তাঁর অবদান বাংলা সাহিত্য ও সমাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলা সম্ভব নয় ! সেই চেষ্টা না করে বরং একালের কবিদের কাছে যাঁরা কেউ কেউ ইতিমধ্যে বেশ পরিচিত , কেউ স্বল্প পরিচিত আবার কেউ একেবারেই অপরিচিত , তাঁরা সকলে তাঁদের মতো করে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ মাস্টারমশায় , যিনি বাঙালি জাতিকে তাঁর ' বর্ণপরিচয় ' - এর মধ্য দিয়ে পরিচিত করেছিলেন , তাঁর প্রতি ছন্দোবদ্ধ ভাবে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেছেন , আমরা তাঁদের সেই একক শ্রদ্ধার্ঘের ফুলগুলিকে একত্রিত করে একটি মাত্র মালা গাঁথার চেষ্টা করেছি মাত্র । ' 
সম্পাদক ড . শেখ কামালউদ্দিন যথার্থই বলেছেন , বিদ্যাসাগর মহাশয় বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ মাস্টার মশায় । এখন মহৎপ্রাণ বিদ্যাসাগর মহাশয় যে কতখানি প্রাসঙ্গিক এবং তাঁকে নিয়ে আজও বাঙালির যে কী ভীষণ আবেগ , মমতা এবং শ্রদ্ধা , তাঁকে এই কাব্যগ্রন্থটি পাঠের মধ্য দিয়ে অনুভব হয় । 

' রুদ্ধ ভাষা আঁধারের খুলিলে নিবিড় যবনিকা 
হে বিদ্যাসাগর , পূর্ব দিগন্তের বনে উপবনে 
নব উদ্বোধন গাথা উচ্ছ্বসিল বিস্মিত গগনে । 
যে বাণী আনিলে বহি নিষ্কলুষ তাহা শুভ্র রুচি , 
সকরুণ মাহাত্মের পূণ্য গঙ্গাস্নানে তাহা শুচি । ' 

মনীষী রবীন্দ্রনাথ উপরে উদ্ধৃত অমিয় বাণীখানি উচ্চারণ করেছিলেন বাঙালি জনগোষ্টির পরম আদরনীয় প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব মহৎপ্রাণ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমীপেষুকে স্মরণ করে । আসলে , বিদ্যাসাগর কেবল একক একটি নামমাত্র নয় তো , তিনি বাঙালি জাতিসত্তার অনন্য পরিচয় , তিনি বাঙালি জাতির একবুক অহংকার । ঋষি বিদ্যাসাগর শুধুমাত্র বাঙালি জাতির প্রথম শিক্ষাগুরু মাত্র নন , তিনি বাঙালি রেনেসাঁর প্রথম যুগপুরুষও বটে । কে না তাঁর ব্যক্তিত্ব , পাণ্ডিত্য এবং মহৎপ্রাণতায় মুগ্ধ হয়েছেন । তাঁকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত , সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত , পূর্ণেন্দু পত্রী সহ আরও অনেক বিশিষ্ট কাব্য স্বজনগণ । মাইকেলের সেই সর্বজন পঠিত কবিতাখানি আজও আমাদের হৃদয়গত । 

' বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে । 
করুণার সিন্ধু তুমি , সেই জানে মনে , 
দিন যে , দিনের বন্ধু ! - উজ্জ্বল জগতে 
হেমাদ্রির হেম - ক্লান্তি অম্লান কিরণে । ' 

বিদ্যাসাগর এবং বঙ্কিমচন্দ্র সমসাময়িক । তবে উভয়ের সম্পর্কের রসায়ন তেমন দানা বাঁধতে পারেনি । বিদ্যাসাগর মহাশয় কিছু না বললেও , বঙ্কিমচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতি খুব একটা প্রীত ছিল না , তা তাঁর একাধিক বক্তব্যে প্রস্ফুটিত হয় ।  ছদ্মবেশের অন্তরাল থেকে বঙ্কিমচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে কষাঘাতে  বিদ্ধ করেছেন একাধিক বার । 

' If successfully transalations from other languages constitue any claim to a high place as an author , we admit them in Vidyasagars case ; and if the compilation of very good primers for infants can in any way strengthen his claim , is strong . But we deny that either translation or primer making evinces A high order of genius ; and beyond translation and primer making Vidyasagar has done nothing .' 

বঙ্কিমচন্দ্র অনুবাদকর্মকে শিল্পই মনে করতেন না , সেইজন্যই তিনি লিখতে পারলেন , ' Vidyasagar has done nothing .' এমন মারাত্মক বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্য । 

বঙ্কিম ' Vidyasagar has done nothing ' বললেও , বাঙালির জাতির রক্ষাকবচ ছিলেন ওই মহান মানুষটি । সব  জাতি এবং ধর্মমতের মানুষের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল । মানবতাই মানব ধর্ম , সকল মানুষ সমান , এমন মহৎ আপ্তবাক্যে পরিপূর্ণ ছিল ঈশ্বরচন্দ্রের  হৃদয় বিনির্মাণ ।  রমেশচন্দ্র দত্ত বঙ্কিমচন্দ্রকে ঊনিশ শতকের বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলে উল্লেখ করলেও প্রখ্যাত ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে অন্যসুর ধরা পড়েছে । ড . চট্টোপাধ্যায় তাঁর ' বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত ' অষ্টম খন্ডে লিখেছেন ,

 ' রমেশচন্দ্র দত্ত বঙ্কিমচন্দ্রকে বলেছিলেন ঊনিশ শতকের বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি , কিন্তু এই উপাধিটি বোধহয় বিদ্যাসাগরেই অধিকতর সুষ্ঠভাবে প্রযুক্ত হতে পারে । বঙ্কিমচন্দ্র শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক , ক্ষুরধার বুদ্ধির নিবন্ধকার , জাতীয়তাবোধের উদগাতা , কিন্তু হিমাচলশুভ্র মহিমায় বিদ্যাসাগর এখনও অতুলনীয় । যাঁর শৈশব কেটেছে সুদূর গ্রামের পুরাতন শিক্ষাপ্রণালীতে , যৌবন অতিবাহিত হয়েছে কলকাতার সংস্কৃত কলেজে - সেই তিনি আচার আচরণ ও চিন্তাপ্রণালীতে প্রচলিত সংস্কার বিসর্জন দিয়ে কিভাবে যে নব্যমানবতার ঋজু পথ ধরলেন , তা এক বিষ্মিত প্রশ্ন । সেকালের অনেক আধুনিক শিক্ষিতরাও পুরাতন সংস্কারের গুটি কাটাতে পারেননি , বঙ্কিমচন্দ্রও না । কিন্তু প্রাচীন সংস্কৃত শিক্ষায় আজীবন লালিত এক দরিদ্র ব্রাক্ষ্মন সহজেই ভূমি ছেড়ে ভূমার দিকে নিজেকে সম্প্রসারিত করেছিলেন । যে ভূমা হচ্ছে দরিদ্র  অসহায়ের প্রতি - দয়া নয় , করুণা নয় - অন্তহীন ভালোবাসা ও অপরিমেয় শ্রদ্ধাবোধ । ' 

যথার্থই বলেছেন শ্রদ্ধেয় ড . চট্টোপাধ্যায় । আমাদের আলোচ্য '  সাগর বহ্নি ' কাব্যগ্রন্থটিও বিদ্যাসাগর চর্চার এক অনন্য দলিল । দেশ গোল্লায় যাচ্ছে , মুখোশধারীরা আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় । নিজেদের স্বার্থে খাদের কিনারে জননী জন্মভূমিকে শিকলে বেঁধে টেনে এনেছে তারা । এই দুর্দিনে বিদ্যাসাগর স্মরণ বড্ড প্রয়োজন ।  বিশিষ্ট অধ্যাপক পবিত্র সরকার তাঁর ' ঈশ্বরকে ' কবিতাই লিখলেন , 

' তুমি তো করতে লড়াই নিজের মতন , 
দ্যাখনি দেশের এই প্রহসন । 
তবুও তোমার নামে এখন জাগি , 
দুখিনী বর্ণমালা পড়তে লাগি । 

বিদ্যাসাগর তাঁর দয়া দাক্ষিণ্যে দরিদ্র অবহেলিত মানুষের পরম আপনজন হয়ে উঠেছিলেন । একেবারেই সংস্কার বর্জিত খাঁটি বাঙালি তিনি । জীবদ্দশায়ই তাঁর ছবি ছাপিয়ে বিক্রি হত । তাঁর সম্পর্কে শিক্ষিত অশিক্ষিত , ধনী দরিদ্রের এক পৃথিবী কৌতূহল ছিল । পরিচারিকারা পর্যন্ত তাঁকে দেখবার জন্য রাস্তায় এসে জমায়েত হতো । কেউ কেউ হতাশ হতেন ঈশ্বরচন্দ্রের বেশভূষা দেখে । অতি সাধারণ বাঙালি পোশাক পড়তেন তিনি । 
বাড়িতে পূজাপাঠের বালাই নেই , সন্ধ্যা আহ্নিক করেন না , ভোজনকালে কায়স্থ বন্ধুর পাত্র থেকে মাছের মুড়ো তুলে নেন ইচ্ছে হলেই । হিন্দুর সমাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্টানে তাঁর আস্থা নেই , এমন প্রচারও ছিল সেই সময়ের কলকাতায় । অনেকেই তাঁকে নাস্তিক পর্যন্ত বলতে ছাড়েননি । ধর্মের থেকে সমাজিক বৈষম্য দূরীকরণই তাঁর কাছে উত্তম কাজ বলে বোধ হয়েছে ।
পতি গত বিধবাদের অসহায় কালযাপন দয়ার সাগর ঈশ্বরচন্দ্রকে ব্যথিত  করলো । অনেক সমাজপতি ও ধর্মনেতার চরম বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি বিধবা বিবাহ প্রচলন করতে সচেষ্ট হলেন ।

' বিধবাবিবাহ প্রচলিত প্রচলিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব ' শিরোনামের নিবন্ধে বিদ্যাসাগর লিখলেন , ' তোমরা মনে কর , পতিবিয়োগ হইলেই , স্ত্রীজাতির শরীর পাষাণময় হইয়া যায় ; দুঃখ আর দুঃখ বলিয়া বোধ হয় না ; যন্ত্রণা বলিয়া বোধ হয় না । দুর্জয় রিপুবর্গ এককালে নির্মূল হইয়া যায় । ...হায় , কি পরিতাপের বিষয় ! যে দেশের পুরুষজাতির দয়া নাই , ন্যায় অন্যায় বিচার নাই , হিতাহিত বোধ নাই , সদসদ্বিবেচনা নাই , কেবল লৌকিক রক্ষাই প্রধান কর্ম ও পরম ধর্ম ; আর যেন সে দেশে হতভাগা অবলাজাতি জন্মগ্রহণ না করে । হা অবলাগণ ! তোমরা কি পাপে , ভারতবর্ষে আসিয়া , জন্মগ্রহণ কর , বলিতে পারি না । ' 

কেশবচন্দ্র বাল্য বিবাহের বিরোধিতা করেছিলেন , অথচ নিজের বালিকা কন্যাকে বিয়ে দিলেন কোচবিহারের মহারাজার সঙ্গে । বিদ্যাসাগর মহাশয় করলেন ঠিক তার উল্টো , নিজের পুত্রের সঙ্গে বিয়ে দিলেন একজন বিধবার । 
শুধু বিধবা বিবাহ কেন , বহুবিবাহের মত সমাজিক ব্যধিও তৎকালিন সমাজে প্রচলিত ছিল । ঈশ্বরচন্দ্র এই ভ্রষ্ট প্রথার বিরুদ্ধেও লড়লেন সর্বশক্তি দিয়ে । বিশিষ্ট কবি কৃষ্ণা বসু তাঁর ' মানবতার যুব প্রতিমা বিদ্যাসাগর ' কবিতাই এভাবে বিদ্যাসাগর স্মরণ করলেন , 

' বিধবাদের বিবাহ দাও , নবীন জীবন গান 
বেজে উঠেছে তোমায় ঘিরে পরাণ আনচান ! 
পুরুষদের বহুবিবাহ রদ করেছ তুমি - 
তোমায় ঘিরে গর্ব করে আমার জন্মভূমি । ' 


শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান বাঙালি কখনও ভুলতে পারবে না । রাজা রামমোহনের গদ্যকে তিনি মাধুর্য্য দান করলেন । বঙ্কিমচন্দ্রের ' Vidyasagar has done nothing .' এহেন মন্তব্য  তাই ভীষণ অবাক করে । পাঠ্যপুস্তকের নিমিত্ত মনীষী ঈশ্বরচন্দ্র অনুবাদকেই অবলম্বন করেছিলেন । প্রত্যক বাঙালির শিক্ষাপ্রবাহের নেপথ্যে বিদ্যাসাগরের অবদান সর্বাধিক । বর্ণপরিচয় পড়েননি এমন বাঙালি একজন খুঁজে মেলা ভার । নারী শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান হিমালয় প্রতীম । তৎকালীন সময়ে হিন্দু মুসলমান উভয় ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষজন মেয়েদের রেখেছিলেন অন্তঃপুরের বাসিনি করে । আধুনা মনের অধিকারী বিদ্যাসাগর মেনে নিতে পারলেন না এই অপব্যবস্থা । অসংখ্য বিদ্যালয় স্থাপন করলেন তিনি । নারী শিক্ষার প্রসার ঘটল । মুক্ত হল নারী মননের বদ্ধকুটি । 

অশনে বসনে তিনি পুরোপুরি খাঁটি বাঙালি । অসহায় মানবের প্রতি তাঁর অন্তহীন ভালোবাসা । এই মানবপ্রেম তাঁর সহজাত , ইয়ংবেঙ্গলদের মত মিল , কোৎ , টমাস পেইন পড়ে শিখতে হয়নি । একদিকে তিনি ছিলেন পৌরুষ বীর্যের প্রতীক , অন্যদিকে তিনি দয়ার সসীম সমুদ্র । মাইকেল মধুসূদন দত্তের মত সহস্র বাঙালি তাঁর দয়ায় বিমুগ্ধ হয়েছেন । দরিদ্র তাঁর ভূষণ , নিন্দুকের গাল মন্দ চলার পাথেয় । স্রোতের বিপরীতেই হাঁটতেন তিনি , মিছিলের অংশ হতেন না , বরং মিছিলকেই টানতেন নিজের দিকে । অষ্টাদশ - ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় মানবতাবাদীদের মতো মেকি মানবপ্রেম নয় , তিনি পথে নেমে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন । সমাজ সংস্কারের  মহান ব্রতে তৎকালীন সমাজের শিক্ষিত অশিক্ষিত কোন দলপতির সাহায্য তিনি পাননি , বরং হয়েছে ঠিক তার উল্টোটা । সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের একটি উদ্ধৃতির সংযোজন করবো , পড়ুন - ' ঊনিশ শতকের পন্ডিত অপন্ডিত , ইংরেজি - ওয়ালা এবং টুলোপন্ডিত , সাহিত্যিক (বঙ্কিমচন্দ্র ) , সমাজের নব্যনেতা (রামগোপাল ঘোষ ) - সকলেই ছিলেন লোকাচারের দাস । কেউ - ই কঠোর সত্যের মুখোমুখি হতে চাননি । এমন কি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথও বিধবা বিবাহের যৌক্তিকতা স্বীকার করতেন না , তত্ত্ববোধনী পত্রিকায় বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহের যৌক্তিকতা বিষয়ে প্রবন্ধ মুদ্রিত করতে চাননি । ' এত বিরোধিতা সত্ত্বেও বিদ্যাসাগর সমীপেষু পিছপা হননি । অন্যায় অসাম্যের বিরুদ্ধে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি লড়েছেন বীর সিংহের মত । বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক অধ্যাপক অনিরুদ্ধ আলি আকতার তাঁর কবিতাই এভাবে ঈশ্বর স্মরণ করেছেন , 

' প্রতিটি শৈশব - ঘরে তোমার হাতের প্রদীপ থেকে আলাউদ্দিনের জন্ম হয় , 
শত শত চেতনগৃহে নিমেষে সে এক - একটি শত ফুট স্বর্ণ 
মূর্তি নির্মাণ করে । ' 

কাব্যগ্রন্থটি বিদ্যাসাগর চর্চার স্রোতকে আরও বিস্তৃতি দিল । দুইশত জন কবি বিদ্যাসাগর সাগর মহাশয়ের জীবন ও কর্মের নানাদিক নিয়ে আলোকপাত করেছেন , যা মনীষী বিদ্যাসাগরের কল্যাণময় জীবনের পুরো আদল হয়তো ধরা সম্ভবপর হয়নি , তবুও নজরুল চর্চার কেন্দ্রের এই মহতী উদ্দ্যোগকে কুর্নিশ করতেই হয় । বর্তমান সময়ে একদিকে যখন ঘন অন্ধকার কুণ্ডুলি পাকানো শুরু করেছে , দেশ যাচ্ছে গোল্লায় , মনীষীদের মুর্ত্তি ভেঙে উল্লাস করার জলছবি দেশময় , সেই মনপচা সময়ে দাঁড়িয়ে বারাসাত নজরুল চর্চা কেন্দ্রের এভাবে বিদ্যাসাগর স্মরণ নিঃসন্দেহেই প্রশংসার দাবি রাখে । 


সাগর - বহ্নি 
সম্পাদক 
ড . শেখ কামালউদ্দিন 
বারাসাত নজরুল চর্চাকেন্দ্র 
মূল্য ২২০





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ধীবর বৃত্তান্ত নাটকের প্রধান কুশীলব ধীবরের চরিত্র বিশ্লষণ করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।

পথের দাবি গল্পে গিরিশ মহাপাত্রের পোশাক পরিচ্ছেদ ও অদ্ভুত দর্শন বিষয়ক আলোচনা ।

দাম গল্পটি ছাত্র শিক্ষক পবিত্র সম্পর্কের উপর গভীর ছায়াপাত করেছে । মাস্টারমশায় শাসন করতেন , ভালবাসতেন না । এটা ঠিক নয় ' , আলোচনা করছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।