পোস্টগুলি

এ আমার দেশপ্রেম - উজ্জ্বল

ছবি
সোনালি ধানের ক্ষেতে,.... ভোরের সূর্যোদয় , শিউলি ফুলের গন্ধে মেতে,... নব বসন্ত ডেকে কয়,     হৈ হৈ রবে...    মাতিয়া ওঠো সবে।। এই ভাবে প্রতিদিন , কাটিতেছিলো দিন,।। সহসা উঠিল রল কোথা হতে এল হায় বাণিজ্যের অছিলায় যমদূত সম ইংরেজ দল।। কি আর কহিব জননী তাদের বর্বরতার কথা তারা তো তোমাকেও মানেনি তোমার সন্তানদের দিয়েছে ব্যাথা।। কখনও বা দাসত্ব করে, কখনও বা অনাহারে রক্ত চক্ষুর করাল থাবায়,,, ওই হিংস্রদের বর্বরতায় প্রাণ দিয়েছে কত বীরের দল ঝড়িয়ে মায়ের চোখের জল।। সেই লড়াইয়ের সাক্ষী দিতে স্বজন হারানোর কান্না কাঁদিতে হিরোসিমা আর নাগাসাকিতে আজও কাঁদে আমাদের অন্তর কাঁদে আজও পলাশির প্রান্তর ।। কত বীরের রক্তে রয়েছে গাথা, যাদের তরে এই স্বাধীনতা পেলাম, ভুলিনি মাগো তোমার ব্যাথা,, হে ভারত মাতা, তোমাকে সেলাম ।।

সে - জীবনানন্দ দাশ

ছবি
আমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে; বলেছিলো: 'এ নদীর জল তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল: সব ক্লান্তি রক্তের থেকে স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি; এই নদী তুমি।' 'এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?' মাছরাঙাদের বললাম; গভীর মেয়েটি এসে দিয়েছিলো নাম। আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি; জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে। সময়ের অবিরল শাদা আর কালো বনানীর বুক থেকে এসে মাছ আর মন আর মাছরাঙাদের ভালোবেসে ঢের আগে নারী এক - তবু চোখ ঝলসানো আলো ভালোবেসে ষোলো আনা নাগরিক যদি না হয়ে বরং হতো ধানসিঁড়ি নদী।

হায় চিল - জীবনানন্দ দাশ

ছবি
হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে-উড়ে ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে! তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে! পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে; আবার তাহারে কেন ডেকে আনো? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে! হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে তুমি আর উড়ে-উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে!

একটি নক্ষত্র আসে - জীবনানন্দ দাশ

ছবি
একটি নক্ষত্র আসে; তারপর একা পায়ে চ'লে ঝাউয়ের কিনার ঘেঁষে হেমন্তের তারাভরা রাতে সে আসবে মনে হয়; - আমার দুয়ার অন্ধকারে কখন খুলেছে তার সপ্রতিভ হাতে! হঠাৎ কখন সন্ধ্যা মেয়েটির হাতের আঘাতে সকল সমুদ্র সূর্য সত্বর তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাত্রি হতে পারে সে এসে এগিয়ে দেয়; শিয়রে আকাশ দূর দিকে উজ্জ্বল ও নিরুজ্জ্বল নক্ষত্র গ্রহের আলোড়নে অঘ্রানের রাত্রি হয়; এ-রকম হিরন্ময় রাত্রি ইতিহাস ছাড়া আর কিছু রেখেছে কি মনে। শেষ ট্রাম মুছে গেছে, শেষ শব্দ, কলকাতা এখন জীবনের জগতের প্রকৃতির অন্তিম নিশীথ; চারিদিকে ঘর বাড়ি পোড়ো-সাঁকো সমাধির ভিড়; সে অনেক ক্লান্তি ক্ষয় অবিনশ্বর পথে ফিরে যেন ঢের মহাসাগরের থেকে এসেছে নারীর পুরোনো হৃদয় নব নিবিড় শরীরে।

অন্য প্রেমিককে - জীবনানন্দ দাশ

মাছরাঙা চ'লে গেছে -- আজ নয় কবেকার কথা; তারপর বারবার ফিরে এসে দৃশ্যে উজ্জল। দিতে চেয়ে মানুষের অবহেলা উপেক্ষায় হ'য়ে গেছে ক্ষয়; বেদনা পেয়েছে তবু মানুষের নিজেরও হৃদয় প্রকৃতির অনির্বচনীয় সব চিহ্ন থেকে দু' চোখ ফিরিয়ে; বুদ্ধি আর লালসার সাধনাকে সব চেয়ে বড় ভেবে নিয়ে। মাছরাঙা চ'লে গেছে -- আজ নয় কবেকার কথা; তারপর বারবার ফিরে এসে ডানাপালকের উজ্জলতা ক্ষয় ক'রে তারপর হয়ে গেছে ক্ষয়। মাছরাঙা মানুষের মতো সূর্য নয়? কাজ করে কথা ব'লে চিন্তা করে চলেছে মানব; যদিও সে শ্রেষ্ঠ চিন্তা সারাদিন চিন্তানাশা সাগরের জলে ডুবে গিয়ে নিঃশব্দতা ছাড়া আর অন্য কিছু বলে? (আলোপৃথিবী/

অদ্ভুত আঁধার - জীবনানন্দ দাশ

ছবি
অদ্ভুত আঁধার এক অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা; যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই - প্রীতি নেই - করুণার আলোড়ন নেই পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া। যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব'লে মনে হয় মহত্‍‌ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।

লোকেন বোসের জার্নাল - জীবনানন্দ দাশ

ছবি
সুজাতাকে ভালোবাসতাম আমি — এখনো কি ভালোবাসি? সেটা অবসরে ভাববার কথা, অবসর তবু নেই; তবু একদিন হেমন্ত এলে অবকাশ পাওয়া যাবে এখন শেলফে চার্বাক ফ্রয়েড প্লেটো পাভলভ ভাবে সুজাতাকে আমি ভালোবাসি কি না। পুরোনো চিঠির ফাইল কিছু আছে: সুজাতা লিখেছে আমার কাছে, বারো তেরো কুড়ি বছর আগের সে-সব কথা; ফাইল নাড়া কি যে মিহি কেরানীর কাজ; নাড়বো না আমি নেড়ে কার কি লাভ; মনে হয় অমিতা সেনের সাথে সুবলের ভাব, সুবলেরই শুধু? অবশ্য আমি তাকে মানে এই — অমিতা বলছি যাকে — কিন্তু কথাটা থাক; কিন্তু তবুও — আজকে হৃদয় পথিক নয়তো আর, নারী যদি মৃগতৃষ্ণার মতো — তবে এখন কি করে মন কারভান হবে। প্রৌঢ় হৃদয়, তুমি সেই সব মৃগতৃষ্ণিকাতলে ঈষৼ সিমুমে হয়তো কখনো বৈতাল মরুভুমি, হৃদয়, হৃদয় তুমি! তারপর তুমি নিজের ভিতরে ফিরে এসে তব চুপে মরীচিকা জয় করেছো বিনয়ী যে ভীষন নামরূপে সেখানে বালির সৼ নিরবতা ধূ ধূ প্রেম নয় তবু প্রমেরই মতন শুধু। অমিতা সেনকে সুবল কি ভালোবাসে? অমিতা নিজে কি তাকে? অবসর মতো কথা ভাবা যাবে, ঢের অবসর চাই; দূর ব্রহ্মাণ্ডকে তিলে টেনে এনে সমাহিত হওয়া চাই এখনি টেনিসে যেতে হবে তবু, ফিরে এসে রাতে ক্লাব...