পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০১৭ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

প্রসঙ্গ রোহিঙ্গা নির্যাতন - আরিফুল ইসলাম সাহাজি

ছবি
দাও খুলে দাও ঐ সীমান্ত ফটক , রক্ষা কর মোদের মৃত্যুপুরী হতে হায়েনার লাল চোখ আজ বড় উজ্জ্বল কোটর হতে ঝরে লাল আগুন , পারছি না আর সইতে এ যাতন রক্ষা কর মোদের এ মৃত্যুপুরী হতে , খোলো সীমান্ত ফটক আমরা বাঁচতে চাই । তোমরা কি সব পাথর হয়ে গেছে , হে সভ্য ভ্রাতা পিতা পিতামহ ভুলে গেছে কি ভাতৃত্ব বন্ধন , দেখতে পাচ্ছ কি আমাদের শিশুদের শব ছড়ানো রয়েছে মাঠ পথ ও নদে , আমাদের নারীরা আজ সম্ভম হারানো নির্জীব প্রতিমা ,আমাদের যুবারা আজ গুলিবিদ্ধ ,ছুরির আঘাতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ে আছে রাজপথে ! তোমরা কি সব পাথর হয়ে গেছে ! এই হিংস্র হায়েনাদের জন্য একটা বুলেট ও কি অবশিষ্ট নেই তোমাদের কাছে ! তোমরা কি সব পাথর হয়ে গেছে !

কবিতার জন্য কবির সুস্থতা দরকার - আরিফুল ইসলাম সাহাজি

ছবি
কবির জীবনটা যদি  নেতিয়ে পড়া সূর্যের                       মত দীপ্তিহীন হয় ,                       গোধূলির মত বিবর্ণ হয় , কবির কলমের কালি যদি বার বার কৃত্তিম জল দিয়ে                          ভিজিয়ে নিতে হয় ,                           তাহলে সুখের আবর্ত কি রচিত হয় ? কবির হৃদয় যদি অশান্ত হয় , বিষাদে পরিপূর্ণ হয়                           তাহলে কি সেখানে ঝড় ছাড়া                            আর কিছু আছরায় ! কবিতার জন্য কবির সুস্থতা দরকার ।
ছবি
কামাল পাশা - কাজী নজরুল ইসলাম [তখন শরৎ-সন্ধ্যা। আস্‌মানের আঙিনা তখন কার্‌বালা ময়দানের মতো খুনখারাবির রঙে রঙিন। সেদিনকার মহা-আহবে গ্রীক-সৈন্য সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হইহা গিয়াছে। তাহাদের অধিকাংশ সৈন্যই রণস্থলে হত অবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। বাকি সব প্রাণপণে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিতেছে। তুরস্কের জাতীয় সৈন্যদলের কাণ্ডারী বিশ্বত্রাস মহাবাহু কামাল-পাশা মহাহর্ষে রণস্থল হইতে তাম্বুতে ফিরিতেছেন। বিজয়োন্মত্ত সৈন্যদল মহাকল্লোলে অম্বর-ধরণী কাঁপাইয়া তুলিতেছে। তাহাদের প্রত্যেকের বুকে পিঠে দুই জন করিয়া নিহত বা আহত সৈন্য বাঁধা। যাহারা ফিরিতেছে তাহাদেরও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গোলাগুলির আঘাতে, বেয়নটের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত, পোষাক-পরিচ্ছদ ছিন্নভিন্ন, পা হইতে মাথা পর্যন্ত রক্তরঞ্জিত। তাহাদের কিন্তু সে দিকে ভ্রূক্ষেপও নাই। উদ্দাম বিজয়োন্মাদনার নেশায় মৃত্যু-কাতর রণক্লান্তি ভুলিয়া গিয়া তাহারা যেন খেপিয়া উঠিয়াছে। ভাঙা সঙ্গীনের আগায় রক্ত-ফেজ উড়াইয়া ভাঙা-খাটিয়া-আদি-দ্বারা-নির্মিত এক অভিনব চৌদলে কামালকে বসাইয়া বিষম হল্লা করিতে করিতে তাহারা মার্চ করিতেছে। ভূমিকম্পের সময় সাগর কল্লোলের মতো তাহাদের বিপুল বিজয়ধ্বনি আকাশে-বাতাসে যেন ক...

নজরুল ইসলাম - উম্মত আমি গুনাহগার

ছবি
<script async src="//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script> <!-- Adsence Ads --> <ins class="adsbygoogle"      style="display:inline-block;width:728px;height:90px"      data-ad-client="ca-pub-8859464621580427"      data-ad-slot="9097738044"></ins> <script> (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({}); </script> উম্মত আমি গুনাহগার (সুন্ধু ভৈরবী- কার্ফা) উম্মত আমি গুনাহগার তবু ভয় নাহি রে আমার আহমদ আমার নবী যিনি খোদ হাবিব খোদার।। যাঁহার উম্মত হতে চাহে সকল নবী, তাহারি দামন ধরি' পুলসিরাত হব পার।। কাঁদিবে রোজ হাশরে সবে যবে নাফসি ইয়া নাফসি রবে, ইয়া উম্মতী বলে একা কাঁদিবেন আমার মোখতার।। কাঁদিবেন সাথে মা ফাতিমা ধরিয়া আরশ আল্লার হোসায়েনের খুনের বদলায় মাফী চাই পাপী সবাকার।। দোযখ হয়েছে হারাম যে দিন পড়েছি কালেমা, যেদিন হয়েছি আমি কোরানের নিশান- বর্দার।।
এল শোকের মোহররম - কাজী নজরুল ইসলাম এল শোকের সেই মোহররম কারবালার স্মৃতি লয়ে। আজি বে-তাব বিশ্বমুসলিম সেই শোকে রোয়ে রোয়ে।। মনে পড়ে আসগরে আজ পিয়াসা দুশের বাচ্চায় পানি চাহিয়া পেল শাহাদাত হোসেনের বক্ষে রয়ে।। এক হাতে বিবাহের কাঙ্গন এক হাতে কাসেমের লাশ, বেহুঁশ খিমাতে সকিনা অসহ বেদনা সয়ে।। ঝরিছে আঁখিতে খুন হায় জয়নাল বেহুঁশ কেঁদে মানুষ ব'লে সহে এত পাথরও যেত ক্ষয়ে।। শূন্য পিঠে কাঁদে দুলদুল হযরত হোসেন শহীদ, আসমানে শোকের বারেষ, মরে আজি খুন হয়ে।।

কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামিক কবিতা - উমর ফারুক

ছবি
তিমির রাত্রি - 'এশা'র আযান শুনি দূর মসজিদে। প্রিয়-হারা কার কান্নার মতো এ-বুকে আসিয়ে বিঁধে! আমির-উল-মুমেনিন, তোমার স্মৃতি যে আযানের ধ্বনি জানে না মুয়াজ্জিন। তকবির শুনি, শয্যা ছাড়িয়া চকিতে উঠিয়া বসি, বাতায়নে চাই-উঠিয়াছে কি-রে গগনে মরুর শশী? ও-আযান, ও কি পাপিয়ার ডাক, ও কি চকোরীর গান? মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ও কি ও তোমারি সে আহ্ববান? আবার লুটায়ে পড়ি। 'সেদিন গিয়াছে' - শিয়রের কাছে কহিছে কালের ঘড়ি। উমর! ফারুক! আখেরি নবীর ওগো দক্ষিণ-বাহু! আহ্বান নয় - রূপ ধরে এস - গ্রাসে অন্ধতা-রাহু! ইসলাম-রবি, জ্যোতি তার আজ দিনে দিনে বিমলিন! সত্যের আলো  নিভিয়া-জ্বলিছে জোনাকির আলো ক্ষীণ। শুধু অঙ্গুলি-হেলনে শাসন করিতে এ জগতের দিয়াছিলে ফেলি মুহম্মদের চরণে যে-শমশের ফিরদৌস ছাড়ি নেমে এস তুমি সেই শমশের ধরি আর একবার লোহিত-সাগরে লালে-লাল হয়ে মরি! ইসলাম - সে তো পরশ-মানিক তাকে কে পেয়েছে খুঁজি? পরশে তাহার সোনা হল যারা তাদেরেই মোরা বুঝি। আজ বুঝি - কেন বলিয়াছিলেন শেষ পয়গম্বর- 'মোরপরে যদি নবী হত কেউ, হত সে এক উমর।' *  *  *  *  *  *  *  * ...

ঈদ মোবারক - কাজী নজরুল ইসলাম

ছবি
শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো, কত বালুচরে কত আঁখি-ধারা ঝরায়ে গো, বরষের পরে আসিলে ঈদ! ভুখারীর দ্বারে সওগাত ব'ইয়ে রিজওয়ানের, কন্টক-বনে আশ্বাস এনে গুল- বাগের, সাকীরে "জা'মের দিলে তাগিদ! খুশীর পাপিয়া পিউ পিউ গাহে দিগ্বিদিক বধূ জাগে আজ নিশীথ-বাসরে নির্নিমিখ! কোথা ফুলদানী, কাঁদিছে ফুল, সুদূর প্রবাসে ঘুম নাহি আসে কার সখার, মনে পড়ে শুধু সোঁদা-সোঁদা বাস এলো খোঁপার, আকুল কবরী উলঝলুল! ওগো কাল সাঁঝে দ্বিতীয়া চাঁদের ইশারা কোন মুজদা এনেছে, সুখে ডগমগ মুকুলী মন! আশাবরী- সুরে ঝুরে সানাই। আতর-সুবাসে কাতর হ'ল গো পাথর-দিল, দিলে দিলে আজ বন্ধকী দেনা-নাই দলিল, কবুলিয়তের নাই বালাই।। আজিকে এজিদে হাসেনে হোসেনে গলাগলি, দোযখে বেহেশতে সুল ও আগুনে ঢলাঢলি, শিরী ফরহাদে জড়াহড়ি! সাপিনীর মত বেঁধেছে লায়লী কায়েসে গো, বাহুর বন্ধে চোখ বুঁজে বঁধু আয়েসে গো, গালে গালে চুমু গরাগড়ি।। দাউ- দাউ জ্বলে আজি স্ফূর্তির জাহান্নাম, শয়তান আজ বেহেশতে বিলায় শরাব-জাম, দুশম্ন দস্ত এক-জামাত! আজি আরফাত-ময়দান পাতা গাঁয়ে- গাঁয়ে, কোলাকুলি করে বাদশা ফকীরে ভায়ে-ভায়ে, কা...
ছবি
আয় বেহেশত কে যাবি আয় - কাজী নজরুল ইসলাম আয় বেহেশতে কে যাবি আয় প্রানের বুলন্দ দরওয়াজায়, 'তাজা-ব-তাজা'র গাহিয়া গান চির-তরুণের চির-মেলায়। আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।। যুবা-যুবতীর সে-দেশে ভিড়, সেথা যেতে নারে বুঢঢা পীর, শাস্ত্র-শকুন জ্ঞান-মজুর যেতে নারে সেই হুরী-পরীর শরাব সাকীর গুলিস্তাঁয়। আয় বেহেশ্তে কে যাবি আয়।। সেথা হর্দম খুশীর মৌজ, তীর হানে কালো-আঁখির ফৌজ, পায়ে পায়ে সেখা আরজি পেশ, দিল চাহে সদা দিল-আফরোজ, পিরানে পরান বা৬ধা সেথায়, আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।। করিল না যারা জীবনে ভুল দলিল না কাঁটা, ছেঁড়েনি ফুল, দারোয়ান হয়ে সারা জীবন আগুলিল বেড়া, ছুঁল না গুল,- যেতে নারে তারা এ-জলসায়। আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।। বুড়ো নীতিবিদ-নুড়ির প্রায় পেল না ক' এক বিন্দু রস চিরকাল জলে রহিয়া হায়!- কাঁটা বিঁধে যার ক্ষত আঙুল দোলে ফুলমালা তারি গলায়। আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।। তিলে তিলে এক্যারা পীষে মারে অপরের সাথে আপনারে, ধরণীর ঈদ-উৎসবে রোজা রেখে প'ড়ে থাকে দ্বারে, কাফের তাহারা এ ইদগায়! আয় বেহেশতে কে যাবি আয়।। বুলবুল গেয়ে ফেরে বলি...
অনেক ছিল বলার - কাজী নজরুল ইসলাম অনেক ছিল বলার, যদি সেদিন ভালোবাসতে পথ ছিল গো চলার, যদি দুদিন আগে আসতে আজকে মহাসাগর স্রোতে চলেছি দূর পারের পথে ঝরা পাতা হারায় যথা, সেই আঁধারে ভাসতে যাই সেই আঁধারে ভাসতে। গহন রাতি ডাকে আমায়, এসে তুমি আজকে কাঁদিয়ে গেলে হায় গো আমার বিদায় বেলার সাঁঝকে আসতে যদি হে অতিথি, ছিল যখন শুক্লা তিথি ফুটতো চাঁপা, সেদিন যদি চৈতালী চাঁদ হাসতে।।
অনুরোধ - কাজী নজরুল ইসলাম পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া। যাও রে বইয়া এই গরীবের সালামখানি লইয়া।। কাবার জিয়ারতের আমার নাই সম্বল ভাই, সারা জনম সাধ ছিল যে, মদিনাতে যাই ( রে ভাই)। মিটল না সাধ, দিন গেল মোর দুনিয়ার বোঝা বইয়া।। তোমার পানির সাথে লইয়া যাও রে আমার চোখের পানি, লইয়া যাওরে এই নিরাশের দীর্ঘ নিশ্বাসখানি। নবীজীর রওজায় কাঁদিও ভাই রে আমার হইয়া।। মা ফাতেমা হযরত আলীর মাজার যেথায় আছে, আমার সালাম দিয়া আইস তাঁদের পায়ের কাছে। কাবায় মোজানাজাত করিও আমার কথা কইয়া।।
অ-নামিকা - কাজী নজরুল ইসলাম তোমারে বন্দনা করি স্বপ্ন-সহচরী লো আমার অনাগত প্রিয়া, আমার পাওয়ার বুকে না-পাওয়ার তৃষ্ণা-জাগানিয়া! তোমারে বন্দনা করি…. হে আমার মানস-রঙ্গিণী, অনন্ত-যৌবনা বালা, চিরন্তন বাসনা-সঙ্গিনী! তোমারে বন্দনা করি…. নাম-নাহি-জানা ওগো আজো-নাহি-আসা! আমার বন্দনা লহ, লহ ভালবাসা…. গোপণ-চারিণী মোর, লো চির-প্রেয়সী! সৃষ্টি-দিন হ’তে কাঁদ’ বাসনার অন্তরালে বসি’- ধরা নাহি দিলে দেহে। তোমার কল্যাণ-দীপ জ্বলিলে না দীপ-নেভা বেড়া-দেওয়া গেহে। অসীমা! এলে না তুমি সীমারেখা-পারে! স্বপনে পাইয়া তোমা’ স্বপনে হারাই বারে বারে অরুপা লো! রহি হ’য়ে এলে মনে, সতী হ’য়ে এলে না ক’ ঘরে। প্রিয় হ’য়ে এলে প্রেমে, বধূ হয়ে এলে না অধরে! দ্রাক্ষা-বুকে রহিলে গোপনে তুমি শিরীন্‌ শরাব, পেয়ালায় নাহি এলে!- ‘উতারো নেকার’- হাঁকে মোর দুরন্ত কামনা! সুদুরিকা! দূরে থাক’-ভালোবাসা-নিকটে এসো না। তুমি নহ নিভে যাওয়া আলো, নহ শিখা। তুমি মরীচিকা, তুমি জ্যোতি।- জন্ম-জন্মান্তর ধরি’ লোকে-লোকান্তরে তোমা’ করেছি আরতি, বারে বারে একই জন্মে শতবার করি! যেখানে দেখেছি রূপ,-করেছি বন্দনা প্রিয়া তোমার...
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে - কাজী নজরুল ইসলাম আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে– মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে। আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে - বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার – ভাঙা কল্লোলে। আসল হাসি, আসল কাঁদন মুক্তি এলো, আসল বাঁধন, মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে। ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে - আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে! আসল উদাস, শ্বসল হুতাশ সৃষ্টি-ছাড়া বুক-ফাটা শ্বাস, ফুললো সাগর দুললো আকাশ ছুটলো বাতাস, গগন ফেটে চক্র ছোটে, পিণাক-পাণির শূল আসে! ঐ ধূমকেতু আর উল্কাতে চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে, আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে! আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন, মদন মারে খুন-মাখা তূণ পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে গো দিগ বালিকার পীতবাসে; আজ রঙ্গন এলো রক্তপ্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে! আজ কপট কোপের তূণ ধরি, ঐ আসল যত সুন্দরী, কারুর পায়ে বুক ডলা খুন, কেউ বা আগুন, কেউ মানিনী চোখের জলে বুক ভাসে! তাদের প্রাণের ‘বুক-ফাটে-তাও-মুখ-ফোটে-না’ বাণীর বীণা মোর পাশে ঐ তাদ...
দুর্ভাগা দেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান, অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান। মানুষের অধিকারে বঞ্চিত করেছ যারে, সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান। মানুষের পরশেরে প্রতিদিন ঠেকাইয়া দূরে ঘৃণা করিয়াছ তুমি মানুষের প্রাণের ঠাকুরে। বিধাতার রুদ্ররোষে দুর্ভিক্ষের-দ্বারে বসে ভাগ করে খেতে হবে সকলের সাথে অন্নপান। অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান। তোমার আসন হতে যেথায় তাদের দিলে ঠেলে সেথায় শক্তিরে তব নির্বাসন দিলে অবহেলে। চরণে দলিত হয়ে ধূলায় সে যায় বয়ে - সেই নিম্নে নেমে এসো, নহিলে নাহি রে পরিত্রাণ। অপমানে হতে হবে আজি তোরে সবার সমান। যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে, পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে। অজ্ঞানের অন্ধকারে আড়ালে ঢাকিছ যারে তোমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান। অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান। শতেক শতাব্দী ধরে নামে শিরে অসম্মানভার, মানুষের নারায়ণে তবুও কর না  নমস্কার। তবু নত করি আঁখি দেখিবার পাও না কি নেমেছে ধূলার তলে হীনপতিতের ভগবান। অপমানে ...
ছবি
গান্ধারীর আবেদন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুর্যোধন।                    প্রণমি চরণে তাত! ধৃতরাষ্ট্র।                    ওরে দুরাশয়, অভীষ্ট হয়েছে সিদ্ধ? দুর্যোধন।                   লভিয়াছি জয়। ধৃতরাষ্ট্র।                    এখন হয়েছ সুখী? দুর্যোধন।                   হয়েছি বিজয়ী। ধৃতরাষ্ট্র।                    অখণ্ড রাজত্ব জিনি সুখ তোর কই রে দুর্মতি? দুর্যোধন।                   সুখ চাহি নাই মহারাজ! জয়, জয় চেয়েছিনু, জয়ী আমি আজ। ক্ষুদ্র সুখে ভরে নাকো ক্ষত্রিয়ের ক্ষুধা কুরুপতি-- দীপ্তজ্বালা অগ্নিঢালা সুধা জয়রস, ঈর্ষাসিন্ধুমন্থনসঞ্জাত, সদ্য করিয়াছি পান; সুখী নহি, তাত, অদ্য আমি জয়ী। পিতঃ, সুখে ছিনু, যবে একত্রে আছিনু বদ্ধ পাণ্ডবে কৌর...

দেয়াল লিখন -আরিফুল ইসলাম সাহাজি

ছবি
আকাশে বাতাসে প্রতিটিক্ষণে আজ যেন শবপ্রদশর্নী মানস জাগৃতির অমানিশায় সেজে উঠেছে পৃথিবী... রুক্ষপ্রান্তর আজ রক্তে ভেজা ,হুঙ্কার শব্দ সর্বত্র রনিত মানবতার জয়গান আজ অপেক্ষার ফুল... সংবাদপত্র আজ খুলি না আর ,দেখে দেখে বড় ক্লান্ত ক্রুব্দ জনসমুদ্রের যন্তনাসিক্ত উন্মাদনা ; একাকিত্বের দ্বীপে আমরা বড় একা.... যন্তনাত্র সময়ে গণকবরের গর্ভে প্রতিধ্বনিত হয় শতাব্দীর যুগযন্তনা ,অসহদহন আর জাতপাতের খেলা.... আহত হরিণীর মত প্রাণপণ বাঁচবার চেষ্টা ,এক লহমায় শেষ জীবনের জয়গাথা ;বিকালে সূর্যের রক্তিম আভা আর কুয়াশার দীর্ঘশ্বাসের অন্তরালে চাপা পড়ছে মানবতা..... রাষ্ট্র ,বিপ্লব ,মৌলবাদ ,ভ্রষ্টাচার ,অন্ধকার যা কিছু মানুষ ও মানবতাবিরোধী , তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সংশপ্তক এর ভূমিকা পালন করা দরকার ;দুপা বেয়ে ঝরুক রক...

কাগজের নৌকা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ছবি
ছুটি হলে রোজ ভাসাই জলে কাগজ-নৌকাখানি। লিখে রাখি তাতে আপনার নাম, লিখি আমাদের বাড়ি কোন গ্রাম বড়ো বড়ো ক'রে মোটা অক্ষরে যতনে লাইন টানি। যদি সে নৌকা আর-কোনো দেশে আর-কারো হাতে পড়ে গিয়ে শেষে আমার লিখন পড়িয়া তখন বুঝিবে সে অনুমানি কার কাছ হতে ভেসে এল স্রোতে কাগজ-নৌকাখানি ।। আমার নৌকা সাজাই যতনে শিউলি বকুলে ভরি। বাড়ির বাগানে গাছের তলায় ছেয়ে থাকে ফুল সকাল বেলায়, শিশিরের জল করে ঝলমল্‌ প্রভাতের আলো পড়ি। সেই কুসুমের অতি ছোটো বোঝা কোন্‌ দিক-পানে চলে যায় সোজা, বেলাশেষে যদি পার হয়ে নদী ঠেকে কোনোখানে যেয়ে - প্রভাতের ফুল সাঁঝে পাবে কূল কাগজের তরী বেয়ে ।। আমার নৌকা ভাসাইয়া জলে চেয়ে থাকি বসি তীরে। ছোটো ছোটো ঢেউ উঠে আর পড়ে, রবির কিরণে ঝিকিমিকি করে, আকাশেতে পাখি চলে যায় ডাকি, বায়ু বহে ধীরে ধীরে । গগনের তলে মেঘ ভাসে কত আমারি সে ছোটো নৌকার মতো - কে ভাসালে তায়, কোথা ভেসে যায়, কোন দেশে গিয়ে লাগে। ঐ মেঘ আর তরণী আমার কে যাবে কাহার আগে ।। বেলা হলে শেষে বাড়ি থেকে এসে নিয়ে যায় মোরে টানি আমি ঘরে ফিরি, থাকি কোনে মিশি, যেথা কাটে দিন সেথা কা...
ওরা এসে আমাকে বলে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ওরা এসে আমাকে বলে, কবি, মৃত্যুর কথা শুনতে চাই তোমার মুখে। আমি বলি, মৃত্যু যে আমার অন্তরঙ্গ, জড়িয়ে আছে আমার দেহের সকল তন্তু। তার ছন্দ আমার হৃৎস্পন্দনে, আমার রক্তে তার আনন্দের প্রবাহ। বলছে সে,--চলো চলো, চলো বোঝা ফেলতে ফেলতে, চলো মরতে মরতে নিমেষে নিমেষে আমারি টানে, আমারি বেগে। বলছে, চুপ করে বস যদি যা-কিছু আছে সমস্তকে আঁকড়িয়ে ধরে তবে দেখবে, তোমার জগতে ফুল গেল বাসি হয়ে, পাঁক দেখা দিল শুকনো নদীতে, ম্লান হল তোমার তারার আলো। বলছে, "থেমো না, থেমো না, পিছনে ফিরে তাকিয়ো না, পেরিয়ে যাও পুরোনোকে জীর্ণকে ক্লান্তকে অচলকে। "আমি মৃত্যু-রাখাল সৃষ্টিকে চরিয়ে চরিয়ে নিয়ে চলেছি যুগ হতে যুগান্তরে নব নব চারণ-ক্ষেত্রে। "যখন বইল জীবনের ধারা আমি এসেছি তার পিছনে পিছনে, দিইনি তাকে কোনো গর্তে আটক থাকতে। তীরের বাঁধন কাটিয়ে কাটিয়ে ডাক দিয়ে নিয়ে গেছি মহাসমুদ্রে, সে সমুদ্র আমিই। "বর্তমান চায় বর্তিয়ে থাকতে। সে চাপাতে চায় তার সব বোঝা তোমার মাথায়, বর্তমান গিলে ফেলতে চায় তোমার সব-কিছু আপন জঠরে। তার পরে অবিচল ...
আমাদের ছোট নদী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি। চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা, একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক, রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক। আর-পারে আমবন তালবন চলে, গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে। তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে। সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে। বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে, বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে। আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর। মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে, ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে। দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া, বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।।
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজি   বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। তব অবগুন্ঠিত কুন্ঠিত জীবনে কোরো না বিড়ম্বিত তারে। আজি   খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো, আজি   ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো, এই    সংগীতমুখরিত গগনে তব    গন্ধ করঙ্গিয়া তুলিয়ো। এই    বাহিরভূবনে দিশা হারায়ে দিয়ো   ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে। অতি   নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে আজি   পল্লবে পল্লবে বাজে রে - দূরে   গগনে কাহার পথ চাহিয়া আজি ব্যকুল বসুন্ধরা সাজে রে। মোর   পরানে দখিন বায়ু লাগিছে, কারে   দ্বারে দ্বারে কর হানি মাগিছে, এই    সৌরভবিহবল রজনী কার   চরণে ধরণীতলে জাগিছে। ওগো   সুন্দর, বল্লভ, কান্ত, তব   গম্ভীর আহবান কারে। বোলপুর ২৬ চৈত্র ১৩১৬ কাব্যগ্রন্থঃ গীতাঞ্জলি রচনা সংখ্যাঃ ৫৫
অভিলাষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১ জনমনোমুগ্ধকর উচ্চ অভিলাষ! তোমার বন্ধুর পথ অনন্ত অপার । অতিক্রম করা যায় যত পান্থশালা , তত যেন অগ্রসর হতে ইচ্ছা হয় । ২ তোমার বাঁশরি স্বরে বিমোহিত মন — মানবেরা , ওই স্বর লক্ষ্য করি হায় , যত অগ্রসর হয় ততই যেমন কোথায় বাজিছে তাহা বুঝিতে না পারে । ৩ চলিল মানব দেখো বিমোহিত হয়ে , পর্বতের অত্যুন্নত শিখর লঙ্ঘিয়া , তুচ্ছ করি সাগরের তরঙ্গ ভীষণ , মরুর পথের ক্লেশ সহি অনায়াসে । ৪ হিমক্ষেত্র , জনশূন্য কানন , প্রান্তর , চলিল সকল বাধা করি অতিক্রম । কোথায় যে লক্ষ্যস্থান খুঁজিয়া না পায় , বুঝিতে না পারে কোথা বাজিছে বাঁশরি । ৫ ওই দেখো ছুটিয়াছে আর-এক দল , লোকারণ্য পথমাঝে সুখ্যাতি কিনিতে ; রণক্ষেত্রে মৃত্যুর বিকট মূর্তি মাঝে , শমনের দ্বার সম কামানের মুখে । ৬ ওই দেখো পুস্তকের প্রাচীর মাঝারে দিন রাত্রি আর স্বাস্থ্য করিতেছে ব্যয় । পহুঁছিতে তোমার ও দ্বারের সম্মুখে লেখনীরে করিয়াছে সোপান সমান । ৭ কোথায় তোমার অন্ত রে দুরভিলাষ ‘ স্বর্ণঅট্টালিকা মাঝে ?' তা নয় তা নয় । ‘ সুবর্ণখনির মাঝে অন্ত কি তোমার ?' তা নয় , যমের দ্বারে ...
অভিমান - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কারে দিব দোষ বন্ধু, কারে দিব দোষ! বৃথা কর আস্ফালন, বৃথা কর রোষ। যারা শুধু মরে কিন্তু নাহি দেয় প্রাণ, কেহ কভু তাহাদের করে নি সম্মান। যতই কাগজে কাঁদি, যত দিই গালি, কালামুখে পড়ে তত কলঙ্কের কালি। যে তোমারে অপমান করে অহর্নিশ তারি কাছে তারি 'পরে তোমার নালিশ! নিজের বিচার যদি নাই নিজহাতে, পদাঘাত খেয়ে যদি না পার ফিরাতে-- তবে ঘরে নতশিরে চুপ করে থাক্‌, সাপ্তাহিকে দিগ্‌বিদিকে বাজাস নে ঢাক। একদিকে অসি আর অবজ্ঞা অটল, অন্য দিকে মসী আর শুধু অশ্রুজল। ২৬ চৈত্র, ১৩০২
ছবি
অন্তর মম বিকশিত করো - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে। নির্মল করো, উজ্জ্বল করো, সুন্দর কর হে। জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে। মঙ্গল করো, নরলস নিঃসংশয় করো হে। অন্তর মম বিকশিত করো, অন্তরতর হে। যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত করো হে বন্ধ, সঞ্চার করো সকল মর্মে শান্ত তোমার ছন্দ। চরণপদ্মে মম চিত নিঃস্পন্দিত করো হে, নন্দিত করো, নন্দিত করো, নন্দিত করো হে। অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে। শিলাইদহ ২৭ অগ্রাহায়ণ ১৩১৪ কাব্যগ্রন্থঃ গীতাঞ্জলি রচনা সংখ্যাঃ ৫

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর কবিতা - অনন্ত প্রেম

অনন্ত জীবন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধিক করি না আশা, কিসের বিষাদ, জনমেছি দু দিনের তরে-- যাহা মনে আসে তাই আপনার মনে গান গাই আনন্দের ভরে। এ আমার গানগুলি দু দণ্ডের গান রবে না রবে না চিরদিন-- পুরব-আকাশ হতে উঠিবে উচ্ছ্বাস, পশ্চিমেতে হইবে বিলীন। তোরা ফুল, তোরা পাখি, তোরা খোলা প্রাণ, জগতের আনন্দ যে তোরা, জগতের বিষাদ-পাসরা। পৃথিবীতে উঠিয়াছে আনন্দলহরী তোরা তার একেকটি ঢেউ, কখন উঠিলি আর কখন মিলালি জানিতেও পারিল না কেউ। নাই তোর নাই রে ভাবনা, এ জগতে কিছুই মরে না। নদীস্রোতে কোটি কোটি মৃত্তিকার কণা ভেসে আসে, সাগরে মিশায়-- জান না কোথায় তারা যায়! একেকটি কণা লয়ে গোপনে সাগর রচিছে বিশাল মহাদেশ, না জানি কবে তা হবে শেষ! মুহূর্তেই ভেসে যায় আমাদের গান, জান না তো কোথায় তা যায়! আকাশের সাগরসীমায়! আকাশ-সমুদ্র-তলে গোপনে গোপনে গীতরাজ্য হতেছে সৃজন, যত গান উঠিতেছে ধরার আকাশে সেইখানে করিছে গমন। আকাশ পুরিয়া যাবে শেষ, উঠিবে গানের মহাদেশ। নাই তোর নাই রে ভাবনা, এ জগতে কিছুই মরে না। কাল দেখেছিনু পথে হরষে খেলিতেছিল দুটি ভাই গলাগলি করি দেখেছিনু জানালায় নীরবে দাঁড়ায়েছিল দুটি...

অসমাপ্ত দিনগুলি - আফজল আলি

ছবি
অসমাপ্ত দিনগুলি । এসো । আমার ভীষণতম উত্তরণের পরে তুমিও একার মতো থাকবে কী লাভ  ? যেদিকে নোঙর ফেলি সেদিকেই রয়ে গেছে রাত!