পোস্টগুলি

জীবন ও সাহিত্যে মানিক বন্দোপাধ্যায় । আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।

ছবি
' জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেওয়ার তাগিদে আমি লিখি । '  কেন লিখি ? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে উপরের কথা গুলো বলেছিলেন অমর কথা শিল্পী মানিক বন্দোপাধ্যায় সমীপেষু । একজন লেখকের , তিনি যদি সত্যিকার অর্থে লেখক হন তবে অবশ্যই , তাঁর মতাদর্শ এমন নির্ভেজাল হবে বইকী । অন্য কারও দ্বারা প্রভাবিত হওয়া তাঁর শোভা পায় না , কবি নির্মেল্দু গুণের একটি চরণবদ্ধ পদের কথা প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ছে , ' আমি আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মত নই । ' আসল কথা , সাহিত্য স্রষ্টা কখনই সাধারণ মানুষের মত নন , সব ঠিক বলে হাই তুলে তাঁদের ঘুমাতে যাওয়া হয় না । আধুনিক যুগেও আমরা তাই কবিকে জেলের ঘানি টানতে দেখি , অসাম্যের বিপ্রতীপে দাঁড়ানোর অপরাধে । মানিক বন্দোপাধ্যায়েরও নিজস্ব এক অনন্য মনন ও দৃষ্টিজাত ভঙ্গি ছিল । অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত লিখেছিলেন , ' কল্লোলের কুলবর্ধন ' , আবার বুদ্ধদেব বসু , মানিক বন্দোপাধ্যায় সম্পর্কে লিখলেন , ' Belated Kollolian ' ।  শ্রদ্ধেয় উভয় কবি ও গবেষকের মানিক বন্দোপাধ্যায় সম্পর্কিত এই সম্ভাষণ পুরোপুরি যুক্তযুক্ত ছিল ন...

নজরুল চর্চা কেন্দ্রের অনলাইন নজরুল যাপন । সরাসরি ২৫ মে ফেসবুক লাইভ ।

ছবি
বিদ্রোহী বীর কবি কাজী নজরুল সমীপেষুর মর্ত্য আগমন তিথি ২৫ মে । উক্ত দিবস নিসন্দেহতিত ভাবে প্রত্যক বাঙালি হৃদয়ের গভীর কোন হয়ে ওঠে উৎসবমুখর । স্মরণে মননে তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করা হয় , লেখায় গানে নৃত্যে কবিপ্রণাম । তবে , এই যে বছরের কালগাড়ি বয়ে বেড়াচ্ছে শবদেহ । দুই হাজার কুড়ি , কী মিষ্টি মধুর নামসাল , কে জানতো হায় , এই বৎসরটি ঘাতক হিসাবে চিহ্নিত হবে ধরাভূমে । সব কেমন উল্টাপাল্টা হল আর কী , তাই বলে কী প্রাণের কবির জন্ম তিথির উৎযাপনে ঘাটতি থাকবে , এক্কেবারেই নয় । বারাসাত নজরুল চর্চা কেন্দ্র , নজরুল নিবেদিত এক সাহিত্য সংস্কৃতিক সংঘটন । পুরোধা পুরুষ নজরুল গবেষক ড . শেখ কামাল উদ্দিন । অনলাইন রবীন্দ্রযাপনের মত চর্চাকেন্দ্র এবার মনের মানুষ নজরুল স্মরণে আয়োজন করেছেন অনলাইন কবিপ্রণাম । আবৃত্তি , নজরুল গীতি , সঙ্গীত , নাটক , নজরুল সম্ভাষণ সহ বিবিধ সুস্থ সংস্কৃতির আয়োজনে মেতে উঠবে উক্ত দিন নজরুল চর্চাকেন্দ্র । অনুষ্টানটি সম্পসারিত হবে নজরুল চর্চাকেন্দ্রের ফেসবুক পেজে । 

নেতাজী এবং নজরুল দুই মনীষীর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন শিবরাম । অভিজ্ঞতাও ছিল দুই রকমের । আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।

ছবি
শিবরাম চক্রবর্তী বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি এক স্রষ্টা । প্রসিদ্ধ তাঁর  কৌতুক বোধ ,  শিবরামের জীবনটাই যেন বিরাট এক  গল্পের প্লট । তাঁর জন্ম মালদহের চাঁচল রাজ পরিবারে । জন্মের পর অল্প কিছুদিন কলকাতাতে থাকলেও , পরে চাঁচল রাজবাড়িতে সপরিবারে চলে আসেন শিবরামরা । এস্টেটের চিকিৎসকও সপরিবারে থাকতেন রাজবাড়িতে  , রিনি সেই ডাক্তারবাবুর মেয়ে । তাঁর সাথে প্রগাঢ় বন্ধুত্বে মাতেন শিবরাম । পরে অবশ্য রিনিরা কলকাতাতে চলে আসেন । কিছুদিন পর কিশোর শিবরাম এন্ট্রান্স পরীক্ষাই পাশ করেন  । সে সময়টা তো অগ্নিগর্ব , ইংরেজরা মজবুত শিকড়ে দাঁড়ানো । স্বদেশী আন্দোলন , স্বশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ঝুঁকছে তরুণ প্রজন্ম । বিষয়টা শিবরামের ক্ষেত্রেও একই । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তখন সর্বভারতীয় স্বদেশী আন্দোলনের গ্রহনযোগ্য মুখ । ওই সময় মালদহে আসেন দেশবন্ধু , সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী বাসন্তী দেবী । উদ্দেশ্য ছিল অসহযোগ আন্দোলনের প্রচার ।  উদীপ্ত হলেন শিবরাম , যোগ দিলেন ভলান্টিয়ার হিসাবে । পরদিনই দেশের কাজ করবেন বলে দেশবন্ধুর  সাথে ফিরতি ট্রেনে চেপে বসেন শিবরাম ।  যদিও লেখক সুরজি...

মানুষ প্রকৃতি এবং ঈশ্বর বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ত্রিবিধ আশ্রয় । আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।

ছবি
শরৎ পরবর্তী বাংলা কথা সাহিত্যের যুগপুরুষ , তাঁর যুগের অন্যতম কথাকার বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় । বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল তারকা তিনি । তাঁর স্বহৃদয় বীণা নিজস্ব গতিতে বহমান , যা বাংলা সাহিত্য দিয়েছে , এক স্বতন্ত্র প্রবাহ । তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় , মানিক বন্দোপাধ্যায়ের মতই এক স্বতন্ত্র ধারা সৃস্টিতে প্রবলভাবে সফল হলেন বিভূতি , তার নেপথ্যে রয়েছে , তাঁর অনুভবমুখর মনন , প্রকৃতিকে তিনি দুচোখ ভরে ভোগ করেছেন । গণমানবের জীবনের সুখ দুঃখ লেপনের সাথে সাথে তাঁর প্রকৃতিক বর্ণনা ভীষণ রকম জীবন্ত  । ' অরণ্যক ' উপন্যসের কথা পাঠক নিশ্চয় বিস্মৃত হননি । ওই উপন্যাসে ভানুমতি , রাজু পাঁড়ে দের সাথে প্রকৃতিকও এক অনন্য চরিত্র হিসাবে উঠে এসেছিল । এবার একটু , চাঁদের পাহাড়ের প্রসঙ্গ টানি ।  উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্য , সাথে বিশ্বসাহিত্যের অনন্য সংযোজন , এ বিষয়ে আশাকরি কেউ দ্বিমত হবেন না । পাঠক , আমার বিশ্বাস আপনারা প্রায় সকলেই পড়েছেন এই অমর লাজবাব উপন্যাসখানি , এইবার একটু ভাবুন , শংকরের ভয়ঙ্কর রোমাঞ্চময় অভিযানের সঙ্গে আমাজনের কি অপূর্ব বর্ণনা শ্রদ্ধেয় বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় দিয়েছেন । শুনলে অবাক হও...

পথের দাবির বাজেয়াপ্তের মধ্যে যৌক্তিকতা দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ , হতাশ হয়েছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।

ছবি
আরিফুল ইসলাম সাহাজি  “আমরা সবাই পথিক। মানুষের মন্যুষত্বের পথে চলবার সর্বপ্রকার দাবি অঙ্গীকার করে আমরা সকল বাধা ভেঙ্গেচুরে চলব” ' পথের দাবি ' শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি উপন্যাস । উপন্যাসটির মধ্য দিয়ে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে । পরাধীন ভারতবর্ষের গণমানবের নিপীড়ন ও মস্তক নত করে থাকার দীর্ঘ ইতিহাস , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে লজ্জা ও অবমাননার ছিল । কংগ্রেসের সাথে সংযোগ থাকলেও সূর্যসেনদের প্রতি তাঁর ভীষণ মমত্ববোধ ছিল । তিনি একত্রে লিখলেন , '  পথের দাবীর বাস্তব প্রতিফলন ঘটাচ্ছে সূর্যসেন। আমার আশীর্বাদ রইলো তার সাথে।'  পরাধীন ভারতবর্ষে তখন চলছে ইংরেজ শাসন , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সেই ছিন্নমস্তা সময়ে  মোস্ট ওয়ান্টেড বিপ্লবী সূর্যসেন সেন সম্পর্কে এমন দরাজ প্রশংসা করতে ভয় পাননি । সুভাষচন্দ্র তাঁর সম্পর্কে যথার্থই লিখেছিলেন , '  একাধারে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ লেখক, আদর্শ দেশপ্রেমিক ও সর্বোপরি আদর্শ মানব।” ' পথের দাবি ' শরৎচন্দ্রের দেশ মায়ের প্রতি অর্ঘ্য স্বরুপ । ইংরেজ শাসন মুক্ত স্বাধীন জননী জন্মভূমির যে স্বপ্...

শতবর্ষ পরেও দেবদাস সমান জনপ্রিয় । আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।

ছবি
' দেবদাস ' কেবল শরৎ সাহিত্যে নয় , সমগ্র বিশ্ব সাহিত্যের এক অনন্য সংযোজন । প্রেমের রোমান্টিকতা এবং বিচ্ছেদের নিগূঢ়তা উপন্যাসটির প্রাণ । অসম্ভব পাঠক আদরনীয় উপন্যাস এটি । প্রায় সকল ভারতীয় ভাষা এবং অনেক বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে গ্রন্থখানি । ভারত , বাংলাদেশ এবং পকিস্তানে উপন্যাসটি অবলম্বন করে একাধিক বার চলচিত্র তৈরি হয়েছে ।'   দেবদাস '  কাহিনী অবলম্বনে প্রথম চলচিত্র রুপায়ন ঘটে  ১৯২৮ সালে। যদিও এটি একটি নির্বাক  ছবি। আবার  ১৯৩৫ ও ৩৬ সালে নির্মিত হয়। অবশ্য এ ছবি  দুটিই সবাক। প্রথমটি বাংলায়   , অন্যটি হিন্দিতে  । বাংলা হিন্দি ছাড়াও ' দেবদাস ' অবলম্বনে তামিল , তেলেগু , উর্দু , মালয়ালম , অসমীয়া সহ ভারতীয় উপমহাদেশের একাধিক ভাষায় চলচিত্র হয়েছে । যা উপন্যাসটি জনপ্রিয়তা আকাশচূম্বি হতে সহয়তা করেছে ।   বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন , ' বাল্য প্রেমে অভিসম্পাত আছে ' , কথাখানি সত্য মিথ্যা কীনা ঈশ্বর জানেন । তবে , এই বাল্যপ্রেমের অভিসম্পাত জীবন্ত আলেখ্য রুপ নিয়েছে ' দেবদাস ' উপন্যাসে । উপন্যাসটির প্রকাশকাল ১৯১৭ , তবে তারও অনেক আগে ১৯০০ সালের প...

শরৎ সাহিত্যে চরিত্রদের স্টারডম নেই , আছে কাদা মাটির সোঁদা গন্ধ । আরিফুল ইসলাম সাহাজি ।

ছবি
দেবের আনন্দ ধাম দেবানন্দপুর গ্রাম/ তাহে অধিকারী রাম রামচন্দ্র মুনসী।/ ভারতে নরেন্দ্র রায় দেশে যার যশ গায়/ হয়ে মোর কৃপাদায় পড়াইল পারসী।'  হুগলির দেবানন্দপুর , বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিশেষ জায়গা জুড়ে রয়েছে । গ্রামখানির সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের যুগপুরুষ ভারতচন্দ্র রায়ের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে , লেখ্য অংশের শুরুতেই কাব্যকারে সেই কথায় বিধৃত হয়েছে । এছাড়াও , উক্ত স্থানটির সঙ্গে গভীরতর নাড়িযোগ আছে অপরাজেয় কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ।  ১৮৭৬ খৃঃ হুগলির দেবানন্দ পুরে জন্মগ্রহণ করেন পাঠকের প্রাণের শিল্পী শরৎচন্দ্র । রবীন্দ্রনাথ তখন মধ্য গগনে প্রবল দীপ্তি নিয়ে  বিদ্যমান , বেঁচে আছেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রও । এই দুই মহীরুহর একচ্ছত্র শাসন বাংলা গদ্য কবিতা উপন্যসের পাতায় । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অভিজাত সম্প্রদায়ের গল্পকথন , বঙ্কিমের ইতিহাস রোমাঞ্চতায় বিমুগ্ধ বাঙালি পাঠক , সেই স্বর্ণযুগেই শরৎচন্দ্রের আবির্ভাব । তবে , কেবল আবির্ভূত হয়েই অন্যদের মত এই দুই প্রবল ব্যক্তিত্বের ছায়ায় মিইয়ে গেলেন না , সরে এলেন তাঁদের পথ থেকে । সমাজের একেবারে অন্ত্যজ প্রান্তিক সমাজে...